1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন

থ্রি এঙ্গেলের শিপইয়ার্ড লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরী করে পরিবেশ ধ্বংস এবং অসহায় কৃষকদের জমি দখলের অপরাধে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড এর শিপইয়ার্ড লাইসেন্স বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ভুক্তভোগী  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর  স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল আটকে দেয় পুলিশ।
পরে সংগঠনের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং নদী রক্ষা কমিশনে যেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন, সহ-সভাপতি রোমান হোসাইন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাব্বী হোসেন শাওন ও প্রচার সম্পাদক বেলাল হোসেন।
এর আগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত ভুক্তভোগী ফরিদ উদ্দিনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরী করে পরিবেশ ধ্বংস এবং অসহায় কৃষকদের আবাদী জমি দখলের অপরাধে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড এর শিপইয়ার্ড লাইসেন্স বাতিল এবং জমি পুনরুদ্ধারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। নৌ চলাচল ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান নদী হিসেবে বিবেচিত মেঘনা ও এর শাখা নদী ফুলদীর একাংশ ভরাট করে জাহাজ মেরামত-নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে যা আপনার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নৌ অধিদপ্তরের শিপইয়ার্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরে ‘থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি দুটি নদী দখলের পাশাপাশি দুটি খালও পুরোপুরি ভরাট করে বহুতল বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। দখল ও ভরাটের ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ায় ফুলদী নদী দিয়ে বড় ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে করে সেখানকার পাঁচটি খাদ্যগুদামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
দুটি নদীর আংশিক দখল ও দুটি খাল ভরাটের পাশাপাশি থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের বিরুদ্ধে দৌলতপুরে অন্তত শখানেক কৃষকের জমি বালি ফেলে দখলেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব জমির দখল ধরে রাখতে দিনরাত ৩০ জন অস্ত্রধারী সেখানে পাহারা দিচ্ছে। মেঘনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদী দখল হয়ে যাওয়ার পরও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। আমরা অবিলম্বে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের মালিকের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, “দখল হওয়া জমির কয়েকজন মালিকের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেয়নি মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন। থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে ব্যবসা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ তাদের কাছ থেকে একটি টাগবোট, পাঁচটি ক্রেন, একটি ক্রু-হাউজবোট, পাঁচটি বার্জসহ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনেছে। এছাড়া থ্রি অ্যাঙ্গেলের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা দামের একটি জরিপ জাহাজও কিনবে বিআইডব্লিউটিএ। এদিকে থ্রি অ্যাঙ্গেলের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা থাকায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দুবার প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে ৩ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩২ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের আইপিও প্রস্তাব বাতিল করে বিএসইসি। এই ভূমিদস্যু থ্রি এঙ্গেলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
ভুক্তভোগী ফরিদ উদ্দিন বলেন, “আমার আবাদী জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। এখন পরিবার নিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, কৃষকদের জমিগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দিন। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আপনার দিকে গজারিয়াবাসী তাকিয়ে আছে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, “২০১৯ সালের ৬ মে মুন্সীগঞ্জ জেলার নদী দখলদারদের একটি তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে পাঠিয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের তৎকালীন ডিসি সায়লা ফারজানা। সেখানেও থ্রি অ্যাঙ্গেলের বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা মেলে। ওই তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির নাম রয়েছে এক নম্বরে। যেখানে বলা হয়েছিল, মেঘনা ও ফুলদী নদীর আংশিক দখল করেছে থ্রি অ্যাঙ্গেল। কিন্তু জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আজও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নৌ চলাচল ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান নদী মেঘনা। এ নদীর প্রবাহ কৃত্রিমভাবে বাধাগ্রস্ত করা হলে তার প্রভাব পড়বে গোটা মেঘনা অববাহিকায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেঘনা ও এর শাখা ফুলদী নদী এবং সংলগ্ন খাল দুটি উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কিন্তু এখনোও পর্যন্ত এই ভূমিদস্যু এবং নদী দখলকারী কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। উচ্চ আদালতের জারি করা রুলের জবাব দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পরেও মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ বা জবাব না দেয়া আদালত অবমাননার শামিল বলে আমরা মনে করি। ২০১০ সালে গজারিয়ার দৌলতপুর এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েক বিঘা জমি কেনে থ্রি অ্যাঙ্গেল। তবে গত দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ সময়ের মধ্যে তারা মেঘনা নদীর পূর্বপাশে অন্তত ৫০০ ফুট জায়গা ভরাট করেছে। এছাড়া এ অংশ থেকে উৎপত্তি হওয়া ফুলদী নদীর দক্ষিণ অংশে নদীর মাঝ বরাবর ভরাট করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দুই নদী ও দুই খাল দখল করেছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড। খরস্রোতের কারণে মেঘনা নদীর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। মেঘনা নদীর তীর থেকে ভেতর পর্যন্ত অন্তত ৫০০ ফুট দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ফুলদী নদীর মাঝ বরাবর পর্যন্ত বালু ফেলা হয়েছে। মেঘনা নদীর যে অংশ থেকে ফুলদী নদীর উৎপত্তি হয়েছে ঠিক সেখানেই থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন ১৫০ একর জমির ওপর জাহাজ নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট করেছে। এ মাটি ভরাটের ফলে মেঘনা নদী যেমন ছোট হয়েছে, তেমনি ফুলদী নদীর অর্ধেকই ভরাট হয়ে গেছে। এতে ফুলদী নদী দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। অথচ কিছুদিন আগেও এ নদী দিয়ে এখানকার পাঁচটি খাদ্যগুদামে পণ্য যেত কার্গোতে করে। থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের প্রকল্পের ভেতর দুটি খাল ছিল। এ দুই খাল দিয়ে আরও পূর্বাঞ্চলের পানি এসে নদীতে পড়ত। কোম্পানি দুটি খালই ভরাট করেছে।
দখল-ভরাটে ফুলদী নদীটি মারা গেলে গজারিয়া উপজেলার বড় একটি অংশজুড়ে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। থ্রি অ্যাঙ্গেলের প্রকল্প এলাকার ভেতরে কুমিরা ও বোরোচক নামে দুটি খাল নদীতে এসে পড়েছিল। প্রায় সারা বছরই এ খালে পানি থাকত। সম্প্রতি এ দুটি খালের পুরোটাই ভরাট করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিন গিয়ে সেখানে খালের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। খালের জায়গায় বহুতল ভবন ও একাধিক শেড তৈরি করেছে কোম্পানিটি। জলাভূমি, নদী-খাল, খাসজমি ও ব্যক্তিগত জমি দখল করে জাহাজ নির্মাণ কারখানা তৈরির প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর পক্ষে গত ৮ মার্চ উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ মুন্সীগঞ্জের ডিসি ও গজারিয়া উপজেলা প্রশাসনকে সরকারি ও বেসরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকে কেন তাদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত ওই রুলের কোনো জবাব দেননি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।একদিকে হাইকোর্টের রুলের জবাব দিচ্ছে না প্রশাসন অন্যদিকে নদী ও সাধারণ মানুষের জমি দখল চালিয়ে যাচ্ছে থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড।”
আল মামুন আরোও বলেন,
“জলাভূমি, উন্নয়ন জলাভূমি ও নদী কখনো লিজ হয় না। এর অর্থ সেটা দখল করা হয়েছে। প্রবাহমান মেঘনা নদী দখল করার কারণে জীববৈচিত্র্যে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছে। কারণ যে এলাকায় নদী প্রবাহমান সেখানে নদীকে কেন্দ্র করে সার্বিক পরিবেশ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটাকেই হত্যা করা হয় নদী দখল করে। আর এর মানে ওই এলাকাকে হত্যা করা। গজারিয়াতে বেশকিছু বছর হলো নদী দখল করেছে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড নামের এই কোম্পানি। নদী দখল করে সম্পদ তৈরি করা যায়, সেটাকে তারা জনপ্রিয়ও করে তুলেছে। বাংলাদেশের পরিবেশকে এই দখলদাররা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এরা দেশ ও পরিবেশের শত্রু। জোর করে বালি ফেলে ব্যক্তি মালিকানার জমি দখলের অভিযোগ ওঠেছে এই কোম্পানীর বিরুদ্ধে। হতদরিদ্র নূর মুহাম্মদদের দুই ভাইয়ের মেঘনাতীরের বালুচরে ৮৭ শতাংশ জমি ছিল। সেখানে তিনটি ফসল ফলত বছরে। সেই জমি গত বছর কাউকে না জানিয়ে রাতের বেলা বালু ফেলে ভরাট করেছে থ্রি অ্যাঙ্গেলের লোকেরা। এরপর থেকে জমিটিতে সশস্ত্র পাহারা থাকায় নূর মুহাম্মদ সেখানে আর যেতেও পারেননি। সংসারের খরচ জোগানোর জন্য একমাত্র আয়ের উৎস জমি হারিয়ে এখন সর্বহারায় পরিণত হয়েছেন তিনি। জমির জন্য তাকে কোনো টাকাও দেয়নি থ্রি অ্যাঙ্গেল। দৌলতপুরের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুস সাত্তারের থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের প্রকল্প এলাকায় ছিল ৪৪ শতাংশ ফসলি জমি। প্রবীণ এ শিক্ষকের জমিও বালু ফেলে দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটির লোকেরা।
একই গ্রামের বাসিন্দা ঈমান আলীর থ্রি অ্যাঙ্গেলের প্রকল্প এলাকায় ছিল এক একরের মতো জমি। সেই জমিও বালু ফেলে দখল করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী পরিবাররা স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট যেয়ে কোন বিচার পাননি। উল্টো থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকির শিকার হয়েছেন। সিএস (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে) জরিপ দিয়ে নদীগুলো রক্ষা করা জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন না করা আদালত অবমাননার শামিল। সাধারণ মানুষের জমির রেকর্ড রক্ষা করা, সরকারি খাল ও খাসজমি রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। এসব যখন দখল হয়, দেশের অন্যতম বড় নদী মেঘনা যখন দখলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করছে না। অবিলম্বে মেঘনা ও ফুলদী নদী দখলমুক্ত করতে হবে। সেখানকার খালগুলোকে অবমুক্ত করতে হবে। সরকারি ও কৃষকের যে জমি তারা দখল করেছে তাও ফিরিয়ে দিতে হবে। থ্রি অ্যাঙ্গেলের টাকায় অবৈধভাবে ভরাট করা নদী, খাল ও জমি দ্রুত উদ্ধার করতে হবে প্রশাসনকে। মুন্সিগঞ্জের জেলা ও গজারিয়া উপজেলা প্রশাসনকে অবশ্যই এসব অপকর্মের দায়ভার নিতে হবে। দেশের উচ্চ আদালত বলার পরেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতার পিছনে কারণ কি তা অবশ্যই জনগণকে জানাতে হবে। কারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় ডিসি বেতন পান। জনগণের নিকট অবশ্যই তাকে জবাবদিহি করতে হবে। থ্রি এঙ্গেল কি রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী? থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে তারা সত্যিকার অর্থে ভূমিদস্যু থ্রি এঙ্গেল কোম্পানীর চেয়ে শক্তিশালী। সরকার কি সত্যিকার অর্থে দেশের নদীগুলো রক্ষা করতে চায়? সরকারকে তার অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। থ্রি এঙ্গেল নদী দখল ও পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কোন তোয়াক্কা করে না। এরা রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের শিপইয়ার্ড লাইসেন্স নিয়ে এধরনের ভূমিদস্যুতা ও নদী দখল কখনোই মেনে নিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। পরিবেশ রক্ষা ও নদীকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেড নামক এই রাষ্ট্র বিরোধী কোম্পানীর শিপইয়ার্ড লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এরা দেশ ও জাতির প্রকৃত শত্রু। এই ভূমিদস্যু কোম্পানীর মালিককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি