সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। মাঠের রাজনীতি না থাকলেও কথামালার রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠেছে পুরো দেশ। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ষড়যন্ত্র এবং জিয়ার মৃত্যুর পর তার লাশ দাফন ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতিতে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপনীতেও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং জিয়াউর রহমানের কবর যে চন্দ্রিমা উদ্যানে নেই সে সম্পর্কে আরেকবার সুনির্দিষ্ট করে বক্তব্য রেখেছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কথা বলছেন। এর পাল্টা জবাব দিচ্ছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে, এই পুরো বিতর্কে আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট নেতা এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। তাদের নীরবতা নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দেখা যায় যে, বিভিন্ন সঙ্কটে বা রাজনৈতিক বিতর্কে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নীরবতা পালন করেন। কেন তারা নীরবতা পালন করেন এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।
আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। এই পুরো বিতর্কে তাকে এক ধরনের নীরব দেখা গেছে। তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। আওয়ামী লীগের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি এখন চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে অবস্থান করছেন। সংগত কারণেই এই বিতর্কে তিনি নেই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তিনি সরব থাকলেও আশ্চর্যভাবে এই ইস্যুতে তিনি নীরবতা অবলম্বন করছেন। তাকে এখন পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে তেমন কোন বক্তব্য রাখতে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যিনি পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে তার ভাইকে হারিয়েছেন। এই বিতর্কে তিনি জাসদকে নিয়ে কিছু কথা বললেও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে অতোটা সরব নন। অনেকেই মনে করেন যে, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ বিষয়ে আরো সরম হতে পারতেন। কিন্তু নানা কারণে তিনি সরব নন। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি কৃষিমন্ত্রী। কিন্তু এই বিতর্কে তাকে তেমন সক্রিয় এবং সরব দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনিও জিয়াউর রহমানের কবর এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে। কারণ, তাকে এসব বিষয় নিয়ে তেমন কোন কথা বলতে দেখা যাচ্ছেনা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যারা জিয়ার কবর এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথার যুদ্ধে লিপ্ত আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: মুরাদ হাসান। এরাই মূলত কথা বলছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা কেন এই বিষয় নিয়ে কথা বলছেন না সে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই এখন নানা রকম কথাবার্তা চলছে।