পিরোজপুরে ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে লক্ষাধীক গ্রাহকের কাছ থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া রাগিব আহসানের দ্বিতীয় দিনের রিমান্ড চলছে
শরিয়া সম্মতভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অর্থবিনিয়োগকারী গ্রাহকরা তাদের মূলধন ফিরে পাবার কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন।
জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে পাঁচ কন্যা সন্তান আর স্ত্রীর ত্রিশ লাখ টাকা এহসানে জমা করে ফেরত না পাবার আশঙ্কায় ষ্টোক করে মারা গেছেন আজিজ মাঝি (৭০) নামে একজন বৃদ্ধ।
জানা যায়, মৃত আজিজ মাঝি ৬ সন্তানের জনক। তার সন্তানেরা প্রত্যেকেই কর্মজীবী কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা, কেউ গৃহপরিচারিকা করে বাবার কাছে টাকা পাঠাতেন। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম জীবন জাপন করে সেই টাকা জমিয়েছিলেন মাল্টিপারপাস কোম্পানি এহসান গ্রুপের কাছে।
পিরোজপুরে এহসানের কাছে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে মারা যাওয়া আব্দুল আজিজ মাঝির পরিবারের জমা বই।
পিরোজপুরে এহসানের কাছে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে মারা যাওয়া আব্দুল আজিজ মাঝির পরিবারের জমা বই।
এ ব্যপারের আব্দুল আজিজ মাঝির বড় মেয়ে তাসলিমা বেগম বলেন, বাড়ির পাশের মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ ইলিয়াস আমার বাবাকে ধর্মের ও কোরআনের কথা বলে মানসিকভাবে নরম করে আমাদের ভাই বোনের জমানো বিভিন্ন সময়ে মোট ৩০ লাখ টাকা জমা নেয়। কথা ছিলো জমি জমার ব্যবসা করে সুদমুক্ত লাভ দেবে। কিন্তু কোনো টাকা পয়সা আমাদের দেন নি। এর পর টাকার চিন্তায় আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমারা কয়েক বার রাগীব আহসানের কাছে যাই। চিকিৎসার জন্য হলেও কিছু টাকা ফেরৎ চাই। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আমার বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গত বৃহস্পতিবার ষ্ট্রোক করে তিনি মারা যান।
ইন্দুরকানী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, ধর্মগুরু ও মসজিদের ইমামদের প্ররোচনায় জেলে, দিন মজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী প্রায় প্রত্যেক ঘর থেকেই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এহসান গ্রুপ।
জানা যায়, পিরোজপুর ,বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ দেশের নানাপ্রান্তে রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক। অপরদিকে মাঠ পর্যায়ে যে সকল ইমাম মোয়াজ্জিন ও মাদরাসার শিক্ষক টাকা তোলার কাজ করেছেন তারাও পড়েছেন তোপের মুখে।
পিরোজপুরে এহসানের কাছে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে মারা যাওয়া আব্দুল আজিজ মাঝি
পিরোজপুরে এহসানের কাছে ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে মারা যাওয়া আব্দুল আজিজ মাঝি
তারা জানান, ঈমামদের ওপর বিশ্বাস উঠে গেছে সাধারণ মানুষের। প্রকাশ্যে চলাফেরা পড়েছে হুমকির মুখে।
ইন্দুরকানী উপজেলা থেকেই ৬০০ গ্রাহকের টাকা জমা নেয়া ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমরা তো বুঝতেই পারিনি এটা ছিলো জনগণকে ধোকা দেয়ার ফাঁদ। বার বার বোঝানো সত্তেও রাগীব আহসান আমাদের কথার কর্নপাত করেননি। গরিব মানুষেরা বিশ্বাস করে আমাদের হাতে টাকা গচ্ছিত রেখেছে। কেউ কেউ ভিটে মাটি বিক্রি করেও টাকা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে আমাদের ১০০ জন মাঠ কর্মীর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি আ. জ. মো. মাসুদুজ্জামান জানান, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তদন্তের স্বার্থে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন (অপরাধ প্রশাসন) বলেন, ভুক্তভোগীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করি গ্রাহকরা সুবিচার পাবেন।