চলেই গেলেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। ক্রিকেটার গড়ার কারিগর ও খ্যাতিমান ক্রিকেট লেখক কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। নানা শারীরিক জটিলতা গ্রাস করেছিল তাঁকে। আশা ছিল তিনি সুস্থ হয়ে ফিরবেন। আবার বসবেন ক্রিকেট-আড্ডার মধ্যমণি হয়ে, আবারও লিখবেন ক্রিকেট নিয়ে। কিন্তু সেটি আর হলো না।
আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল জালাল আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
দেশের বহু শীর্ষ ক্রিকেটারের গুরু ছিলেন জালাল আহমেদ চৌধুরী
শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন জালাল আহমেদ চৌধুরী। সে সময় তাঁর ফুসফুসের জটিলতা ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, খ্যাতিমান এ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হয়তো অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। কিন্তু গত শুক্রবার আবারও শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করতে হয়। ভেন্টিলেশনে দিতে হয় জালাল আহমেদ চৌধুরীকে।
তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল। ফুসফুসের সংক্রমণও বেড়ে গিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকেই গেছে। কিডনি ও হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতা দ্রুত কমে যাচ্ছিল। রক্তচাপের মাত্রাও ছিল নিম্নমুখী। চিকিৎসকেরা তবু হাল ছাড়েননি, চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আজ তিনি ছিন্ন করলেন সব বন্ধন।
জালাল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট লেখকও
দেশের অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার জালাল আহমেদ চৌধুরীর হাতে গড়া। দেশের ক্রিকেটের দিগন্তরেখা বদলে দিয়েছিল যে সাফল্য, সেই ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলটিও তাঁর হাতেই গড়া। প্রাথমিক প্রস্তুতি তাঁর অধীনেই হয়েছিল। পরে কোচ হিসেবে যোগ দেন গর্ডন গ্রিনিজ।
ষাট ও সত্তরের দশকে ঢাকা ক্রিকেট লিগে খেলেছেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। এরপর শুরু করেন ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতা। আশির দশকে ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমসে কাজ করেছেন তিনি। ছিলেন স্পোর্টস ইনচার্জ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট কোচ হিসেবে নিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ। মোহামেডান, কলাবাগানসহ বেশ কয়েকটি দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। বেশ কয়েকবার কোচ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলেরও।
দেশের ক্রিকেটের প্রাথমিক দিনগুলোতে যে কয়জন ক্রিকেট কোচ নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, জালাল আহমেদ চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। আম্পায়ারিংও করেছেন তিনি।
দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট লেখক ছিলেন জালাল চৌধুরী। প্রায় সব কটি জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন সময় তাঁর লেখা সমৃদ্ধ করেছে দেশের ক্রিকেট সাংবাদিকতাকে। ক্রিকেটবিষয়ক যেকোনো ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র হয়ে ছিলেন তিনি। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই লেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। জীবনের শেষ বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। অনেক বিষয়েই লিখতেন মন খুলে।
বিপত্নীক জালাল আহমেদ চৌধুরীর দুই সন্তানই প্রবাসী। আজিমপুরের একটি ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করতেন এই বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। তাঁর জানাজা আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। আসরের নামাজের পর আরও একটি জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে আজিমপুর কবরস্থানে।