পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অনৈসলামিক হতে পারে। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আদায় করতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কী করতে হবে তার বিস্তারিত বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন ইমরান খান।
তিনি আফগান নেতৃত্বকে আহ্বান জানান, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে এবং মানবাধিকারকে সম্মান জানাতে।
ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিৎ নয়, যা পাকিস্তানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গত সপ্তায় তালেবান নেতৃত্ব স্কুল খুলে দিলেও মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি, শিক্ষকতার কাজে ফিরে যাবার অনুমতি পেয়েছেন শুধু পুরুষ শিক্ষকরা।
বিবিসির জন সিম্পসনকে ইমরান খান বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা যেসব বিবৃতি দিয়েছে সেগুলো খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আমি মনে করি, তারা মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেবে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েরা শিক্ষিত হতে পারবে না, এমন ধারণা স্রেফ অনৈসলামিক। এর সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।’
গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই আশঙ্কা বাড়ছিল যে দেশটিতে ১৯৯০ দশকের মত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা ফেরৎ আসবে, যেখানে কট্টর ইসলামপন্থীরা নারীদের অধিকারকে চূড়ান্তভাবে খর্ব করেছিল।
গত সপ্তায় মেয়েদেরকে বাদ রেখে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল ফেলে দেয়। পরে তালেবান মুখপাত্র বলেন, মেয়েদেরকে যত দ্রুত সম্ভব স্কুলে ফেরানো হবে।
কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়নি, কবে নাগাদ স্কুলে ফিরতে পারবে মেয়েরা এবং তাদের যদি শ্রেণিকক্ষে ফিরতে দেয়া হয় তাহলে ঠিক কী ধরনে শিক্ষার সুযোগ তারা পাবে।
তালেবান বাস্তবতা মাথায় রেখে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য শর্তগুলো পূরণ করছে কি না- এমন প্রশ্নে ইমরান খান বারবার আহ্বান জানান, আন্তর্জাতিক মহলের উচিৎ তাদের আরও সময় দেয়া।
‘এখনই কোনো কিছু বলার মতো সময় আসেনি’, ইমরান খান বলেন বলেন। তিনি এর সাথে যোগ করেন, তার আশা আফগান নারীদের অধিকার দেয়া হবে।
জিহাদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানকে দৃঢ় মিত্র বলে মনে করেন না সবাই।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তালেবানকে সাহায্য সহযোগিতা করার। পাকিস্তান যদিও এই অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করেছে।
৯/১১ হামলার পর কথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে অবস্থান প্রকাশ করে পাকিস্তান। কিন্তু একই সময়ে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তালেবানের মত ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলে।
ইমরান খান বলেন, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের সাথে মিলে পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নেবে তারা তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে কি না।
‘সব প্রতিবেশী একসাথে হয়ে দেখবো তাদের কতটা উন্নতি হচ্ছে। তাদের স্বীকৃতি দেয়া না দেয়া হবে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত।’
ইমরান খান কট্টর এই গোষ্ঠীটিকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যদি এতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশটি একটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
‘তারা যদি সব গোত্রকে অন্তর্ভুক্ত না করে, তাহলে তারা একটি গৃহযুদ্ধ দেখবে, সেটা এখন হোক আর পরেই হোক। তার মানে হবে একটি অস্থিতিশীল, গোলযোগপূর্ণ আফগানিস্তান, যেটা সন্ত্রাসীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। সেটা একটা শঙ্কার বিষয়।’
মঙ্গলবার তালেবান মুখপাত্র সরকারের বাকি সদস্যদের নাম ঘোষণা করে, যার সব সদস্য পুরুষ। নতুন যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন চিকিৎসক, যাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করা হয়েছে।
খবর বিবিসি