ঝিনাইদহের মান্দারতলা গ্রামের রাস্তায় একটি ইট পড়েনি ৫০ বছরে। রাস্তাটির অবস্থান সদর উপজেলার পোড়াহটি উইনিয়নের মান্দারতলা গ্রামের মান্দারতলা ঈদগাহ মোড় থেকে পশ্চিমপাড়া জামাল মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত । হাঁটুসমান কর্দমাক্ত হয়ে নারী-পুরুষ, শিশু ও অসুস্থ রোগী নিয়ে চলাচলে এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় জনপ্রতিনিধিদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি কাঁদায় প্লাবিত হয়ে পড়ে আছে। ঘোড়ার গাড়ী যেতে হলে ঘোড়া পর্যন্ত লাফিয়ে উঠে সেখানেতো মানুষ। আষাড় মাস শুরু হলে যন্ত্রনা বাড়ে তিন চার গ্রামের লোকের। আর চলে কার্তিক মাস পর্যন্ত। এ কষ্ট দেখার মতো কোন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নেই। প্রায় এক কিলো মিটার রাস্তার এ হাল। গ্রামে কৃষক থেকে সরকারী চাকুরীজীবি বাস করে। আর শিক্ষার্থীদের কথা তো বাদ থাকলো। তাদের দুঃখ দুরদশা আরো অবর্নণীয়। রাস্তা ঘাটে কাদার কারণে স্কুলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। গ্রামে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কেউ অসুস্থ হলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হয়। বর্ষা মৌসুম আসলে অনেকে শহরে গিয়ে রাত কাটায়।
করিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সদান্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, আমার বাড়ী মান্দারতলা গ্রামে। পাশের গ্রাম করিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। কিন্তু আষাড় মাস আসলে শুরু হয় যন্ত্রনা আর চলে কার্তিক মাস পর্যন্ত। রাস্তার কাঁদা দিয়ে হাটা যায় না। আর এসময় হাতে পলিথিনে থাকে শার্ট-প্যান্ট ও সেন্ডেল। পরনে থাকে লুঙ্গি ও গেনজি। বিভিন্ন বাড়ীর মধ্যে দিয়ে হেটে গিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে হাত-পা ধুয়ে লুঙ্গি-গেনজি খুলে শার্ট-প্যান্ট পরে ও সেন্ডেল পায়ে দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করি।
মান্দারতলা গ্রামের সেলিম মাহমুদ লিটন বলেন, বাব-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি রাস্তাটি কাঁদা থাকে। ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে রাস্তাটি হয়ে আছে। কিন্তু রাস্তায় একটি ইটও পড়েনি। সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার বা এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করে কোনা লাভ হয়নি। তারা শুধু আশার বানী শুনিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধ রেজাউল করিম জানান, বৃষ্টির সময় কাদাপানির কারণে কোন বাড়িতে বিয়েও হয়না। এমনকি বাড়ি থেকেও কেও বের হয়না। বলা যায় কাঁদাপানিতে অবরুদ্ধ দশা গ্রামবাসির। রাস্তায় এতই কাঁদা থাকে যে রোগী ও বৃদ্ধ মানুষ কোলে করে নিয়ে চলাচল করতে হয়। কাঁদার জন্য মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে না।
আরিফুল ইসলাম জানানবর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ পথচারী তো দূরের কথ গরু ছাগলও হেটে যাতায়াত করতে পারছে না। ডিজিটাল ও সভ্যতার এই যুগে এমন রাস্তার কথা কেও কল্পনাও করতে পারে না।
আনিচুর রহমান মিলন জানান, একটু বৃষ্টিতেই কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে রাস্তাটি। কাঁদার মধ্য দিয়েই চলাচল করতে হয় গ্রামের মানুষের। হাঁটু সমান কাদা ভেঙ্গে চলাচলের এমন দৃশ্য এখন আর কোথাও দেখা যায় না।
স্থানীয় ওয়ার্ড (১নং ওয়ার্ডের) কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম জানান, আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কয়েক বৎসর ইউনিয়ন মিটিং এ তালিকা ভুক্ত করেছি। তাতেও কোন কাজ হয়নি। তাছাড়া সদর উপজেলা এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করে রাস্তাটি করতে পারেনি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, রাস্তাটির বিষয়ে আমি খোজ খোবর নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যরস্থা করবো।