আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরে সুস্থে ও দেখে শুনে সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর কমিটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সদ্যসমাপ্ত নিউইয়র্ক সফর ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনের আগে ছাত্রলীগের আট নেতাকে গণভবনে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়। কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বসেন প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করেন।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, শুরুতেই উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাদের কথা বলতে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তুলে ধরেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে করণীয় কী হবে এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চান। সেই সঙ্গে প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা ও সমস্যাগুলোও তুলে ধরেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চেনা পরিবেশ ফিরে আসুক। তবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পরিবেশ যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে কোনো মহল যেন শিক্ষার্থীদের ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস হল কমিটির বিষয়ে বলেন, অনেক দিন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি হয় না। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে।
তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাড়াহুড়া না করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরিস্থিতি দেখো। তারপর ধীরে সুস্থে, দেখে শুনে কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি নাও।
এ সময় হল কমিটি সম্মেলনের উদ্বোধনে অতিথি থাকার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান সনজিত চন্দ্র দাস। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা তো ভালো কাজই করছো। আমার বয়স হয়েছে।
তখন মজার ছলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো তোমাদের দাদির বয়সী।’
প্রসঙ্গক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখাগুলোর সম্মেলনের বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় নেতাদের তারাহুড়ো না করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরে সুস্থে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেওয়ারও কথা বলেন তিনি।
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের বিষয়ে কথা বললে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে, সে গ্যাপ যেন পূরণ করা হয় সে বিষয়ে পিএসসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কথা বলবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবাই নেতা হবে না, সম্ভবও নয়। এজন্য পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। আধুনিক ও প্রযুক্তি শিক্ষায়ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে।’
ছাত্রলীগের নেতারা অনুরোধ করেন আগামীতে তাদের যে কোনো বড় অনুষ্ঠানে যেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ থাকেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মৌন সম্মতি দেন বলে জানান বৈঠকে থাকা একাধিক নেতা।
বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘অনেক দিন পর নেত্রীকে কাছে পেয়ে আমরা খুব আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা সব সময় নেত্রীর ছায়া তলে থেকে তাঁর নির্দেশনা নিয়ে কাজ করতে চাই। নেত্রী আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন, কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সে নির্দেশনা মেনে সংগঠন পরিচালনা করব।’
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পরে আমরা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। নেত্রীর আঙিনায় আমরা মাতৃস্নেহ অনুভব করি। আমরা আমাদের সাংগঠনিক বিষয়গুলো নেত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী দিনগুলোতে সেভাবেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাব।’
এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।