নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ফাইভ জি’ সহায়ক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সেই লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবটি মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন আল রশিদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো শক্তিশালী করতেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশ তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হবে।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩০১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। বাকি ৩৯২ কোটি টাকার যোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়কারী কোম্পানি বিএসসিসিএল।
চলতি বছরের অক্টোবরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লংডিস্টেন্স টেলিকমিউনিকেশনস সার্ভিস (আইএলডিটিএস) পলিসি ও আইসিটি নীতিমালার আলোকে দেশে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে বিএসসিসিএল অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।
বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়া তিনটি ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) সার্ভিসেস অপারেটর কোম্পানিও একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ বিএসসিসিএল এককভাবে সরবরাহ করছে।
বর্তমানে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৪ বা (এসএমডব্লিউ-৪) ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৫ (এসএমডাব্লিউ-৫) সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়ে বিএসসিসিএল ব্যান্ডউইথ সেবা দিচ্ছে।
প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন কেবল এবং এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ সাবমেরিন কেবল বসাতে হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত এসএমডাব্লিউ-৬ সাবমেরিন কেবল ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর অবধি বিস্তৃত হবে।
এর কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারে কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
বিএসসিসিএল ও আইটিসির ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বিশ্লষণ করে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির হার প্রায় ৭০ শতাংশ। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকতে পারে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
২০২১ সাল নাগাদ দেশে ৫জি সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৪ এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৫ এ যুক্ত হয়। আলাদা দুটি কনস্টোমিয়ামের মাধ্যমে এই সাবমেরিন কেবল দুটি পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথম সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৪ এর ২০ বছরের আয়ুস্কাল আগামী ২০২৫ সালে শেষ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এ কেবল ১৫ বছরের পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেবা বিঘ্নিত হওয়ার হার বেশি। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে পুরনো প্রযুক্তির্ কারণে এই কেবলের মাধ্যমে যথেষ্ট দ্রুত গতির সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে এর সংযোগ নেওয়ার আগ্রহ কম।
এসব বিষয় বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে জানানো হয়েছে।