প্রেমিক মাহবুবের সাথে নিজের তোলা কিছু ছবি ফেরত চাইতে গিয়ে প্রেমিক ও তার আরেক বন্ধুর নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়েছে এক কিশোরী। গত শুক্রবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের কাশবনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাহবুব (২১) ও পলাশ (২০) নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে ফুলছড়ি থানা পুলিশ। আটক মাহবুব সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গা মোড় এলাকার রসুল হাওলাদারের ছেলে ও পলাশ একই এলাকার সাখাওয়াত হাওলাদারের ছেলে।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, বোনের বাড়ি সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গা মোড় এলাকায় হওয়ায় সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতো ভুক্তভোগী ওই কিশোরী (১৫)। সেখানেই পিকআপ ভ্যানের হেলপার মাহবুব হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সম্পর্কের কারণে একদিন ধর্ষণ করতে চায় মাহবুব। এরপর মাহবুবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ছয়-সাত মাসের সম্পর্কের ইতি টানে ওই কিশোরী।
সম্পর্ক শেষ হলেও তাদের দুজনের কিছু ছবি প্রেমিক মাহবুবের কাছে থেকে যায়। গত রমজান মাসে তোলা ওই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রায়ই দেখা করার জন্য চাপ দিত এবং দেখা করলে ওই ছবিগুলো ফেরত দিবে বলেও আশ্বাস দিত মাহবুব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দুপুরে ছবিগুলো মুছে ফেলাসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাহবুব ও তার বন্ধু পলাশ ওই কিশোরীকে গাইবান্ধার বড় মসজিদের সামনে থেকে প্রথমে বাদিয়াখালি ও পরে ফুলছড়ি ঘাটে নিয়ে আসে।
তারপর বিয়ের প্রলোভনে বিকেল ৩টার দিকে মেয়েটিকে নিয়ে নৌকাযোগে যমুনা নদী পার হয়ে ফুলছড়ির একটি চরের কাশবনে নিয়ে যায় মাহবুব ও তার বন্ধু পলাশ। সেখানেই তারা দুজন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওসার আলী বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু স্যারের নির্দেশনায় খুব দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছি। এসময় মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত তাদের মোবাইল দুটি জব্দ করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটিকে কাশবনের গহীনে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মাহবুব ও পরে তার বন্ধু পলাশ পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় তারা একে অপরের ধর্ষণের ছবি ভিডিও ধারণ করে মোবাইলে। তারপর তাকে অসুস্থ অবস্থায় কাশবনে রেখে দুজন যমুনা নদী পার হয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। পরে ভুক্তভোগী কিশোরী অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন লোকের সাহায্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে এসে পরিবারের কাছে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে।
শনিবার মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মা তাকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেলে মেয়েটির মা বাদী হয়ে ফুলছড়ি থানায় গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনা শুনে দ্রুত অভিযান চালিয়ে মাহবুব ও পলাশকে তাদের নিজ এলাকা সাঘাটা থানাধীন ভাঙ্গা মোড় থেকে গ্রেফতার করে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আরও কারা কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত, তা খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। ভিকটিমকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।