মিয়ানমারের বিরোধীদলগুলো যে উস্কানি ও সহিংসতা চালাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান।
দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দাবি করেছেন সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আসিয়ানের রোডম্যাপের বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় জোটের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে হ্লাইংকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর করা প্রথম মন্তব্যে হ্লাইং মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনর্বহাল করতে জান্তার নিজস্ব পাঁচ-ধাপের পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি করেন কিন্তু আসিয়ানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
নিষিদ্ধ ঘোষিত জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার (এনইউজি) ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দলগুলো আসিয়ানের নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা দেন ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া হ্লাইং। এই অভ্যুত্থান মিয়ানমারকে মারাত্মক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
টেলিভিশনে বেসামরিক পোশাকে হাজির হওয়া এই জেনারেল বলেন, “সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উস্কানির কারণে আরও সহিংসতা হচ্ছে। কেউ তাদের সহিংসতার দিকে নজর দিচ্ছে না, শুধু দাবি করছে আমরা সব সমস্যার সমাধান করবো। এই বিষয়ে আসিয়ানের কাজ করা উচিত।”
২৬-২৮ অক্টোবরের শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমার থেকে অরাজনৈতিক প্রতিনিধি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসিয়ান। একে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সামরিক নেতাদের প্রতি এক নজিরবিহীন অবজ্ঞা বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।
হ্লাইং বলেছেন, সমঝোতা অনুযায়ী আসিয়ানের বিশেষ দূত এরিওয়ান ইউসুফ মিয়ানমার পরিদর্শনে আসুন এটি তারা চান, কিন্তু তার কিছু দাবি আপসযোগ্য নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
এপ্রিলে মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ানের বিশেষ সম্মেলনে যে ৫টি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে- সহিংসতার অবসান, সব পক্ষের মধ্যে একটি গঠনমূলক সংলাপ, সংলাপ সহজতর করতে আসিয়ানের বিশেষ দূত নিয়োগ, সহায়তা গ্রহণ ও ওই দূতের মিয়ানমার সফর।
কিন্তু আসিয়ানের এই বিশেষ দূত চলতি মাসেও মিয়ানমার যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ইউসুফ চাইছেন মিয়ানমার গিয়ে অং সান সু চিসহ বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করতে ও কথা বলতে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের মুখপাত্র জ মিন তুন সম্প্রতি বলেছেন, ইউসুফকে মিয়ানমারে স্বাগত জানানো হবে, কিন্তু তাকে সু চির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার (এনইউজি) সু চির দলের সদস্যসহ অভ্যুত্থানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর একট বৃহত্তর জোট। তারা ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামের মিলিশিয়া বাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। এই বাহিনী মিয়ানমারের বেশি কয়েকটি অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে।
এনইউজি সম্প্রতি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছে।
সোমবার দেশটির এই ছায়া সরকার আসিয়ানের সম্মেলনে জান্তা নেতাদের না রাখার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু বৈধ প্রতিনিধি এনইউজির হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে।