নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ২৪ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, সরকার করোনার র্যাপিড টেস্টের জন্য অ্যান্টিজেন টেস্টকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়। তার প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে দ্রুত ও স্বল্প সময়ে করোনা শনাক্তের অ্যান্টিজেন টেস্ট। যা কিনা করোনা শনাক্তে র্যাপিড টেস্ট নামেই পরিচিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারিত জেলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা অ্যান্টিজেন টেস্ট নিয়ে নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে তারা মনে করছেন।
করোনা মহামারির শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর বিষয়ে তাগিদ দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে, কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করোনা রোগী শনাক্ত, মহামারিতে নেওয়া পরিকল্পনাসহ নানা নীতিনির্ধারণে সাহায্য করবে।
অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, করোনা থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় বর্তমানে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে কিনা। শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তের দ্রুততম টেস্ট হচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট। শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তা থেকে প্লাজমা আলাদা করে একটি কিটের মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। অর্থাৎ কারও মধ্যে ভাইরাসটি অবস্থান করলে অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ আসবে। অ্যান্টিজেন থাকা মানে সে ভাইরাসে আক্রান্ত। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা-করোনার র্যাপিড টেস্ট নামেও পরিচিত। তবে সরকার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দিলেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি।
গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অবশেষে বুধবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অদিধফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচারক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আগামী শনিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে দেশের ১০ জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু হতে যাচ্ছে। পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও মাদারীপুর জেলার সদর হাসপাতাল এবং সিলেট বিভাগের শহীদ শামসুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা চলে গেছে পরীক্ষা শুরু হওয়া প্রতিটি জেলায়। বুধবার অধিদফতরে এসব জেলার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণও করানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা অ্যান্টিজেন কিট নিয়ে নিজ নিজ জেলায় চলেও গেছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘এর আগেও আমরা এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এবারেও অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার আগে সেখানকার চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট আর এখানে যেহেতু ডাটা এন্ট্রি করার বিষয় রয়েছে তাই পরিসংখ্যানবিদকেও যুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দরকার হলে আরও জেলাকেও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।’
আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, প্রতি জেলা থেকে একজন চিকিৎসক, একজন টেকনোলজিস্ট এবং একজন পরিসংখ্যানবিদকে এবারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য।
জানতে চাইলে বুধবার রাতে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ফজলুর রহমান বলেন, ‘একজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন টেকনোলজিস্ট ও একজন পরিসংখ্যানবিদ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স রয়েছে। সেখানেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে মনে করছি।’
আপনারা প্রস্তুত রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিম আসছে। যদি রি-এজেন্ট দেওয়া হয় তাহলে আমরা করবো। এর আগে অন টেস্ট আমাদের ৫০টি নমুনা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আমরা করেছি। কোনও অসুবিধা হয়নি।’
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. এ এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখনও চিঠি পাইনি। তবে বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্স রয়েছে। সেখানে হয়তো নির্দেশনা পাবো।’
একই কথা বলেছেন মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এন্টিজেন টেস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেটের ডা. শামসুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম জানান, ‘এ রকম তথ্য পাইনি, আমার জানা নেই।’ এই হাসপাতাল থেকে কেউ ঢাকাতে প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সাত দিন আগে তিনি এ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। তাই এটি বলতে পারছেন না।