বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই এলমেলো পাপুয়া নিউ গিনি। পাওয়ার প্লে’তে ৪ উইকেট হারানো দলটির ১০ ওভার শেষ হতেই নেই ৬ উইকেট। বাকি ব্যাটসম্যানদেরও আসা-যাওয়ার মিছিলে লড়াই করতে পারলেন না কিইউ। সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে এনে দিল বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের টিকিট। রাজকীয় জয়ে যেন হাফ ছেঁড়ে বাচার সঙ্গে সুপার টুয়েলভও নিশ্চিত করল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দেখে শুনেই করে পাপুয়া নিউ গিনি। প্রথম দুই ওভারে কোন উইকেট না গেলেও তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে লেগা সিয়াকাকে আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন সাইফউদ্দিন। এর পরের ওভারে আসাদ ভালাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার ওই ওভারে কোন রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন।
পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল তুলে মারতে গিয়ে নাইম শেখের হাতে ক্যাচ তুলে দেন চার্লস আমিনি। খানিকটা দূরে থাকলেও দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি লুফে নেন নাইম। চতুর্থ বলে হিরি হিরিকেও সাজঘরে ফেরান সাকিব। তাতে নিজের প্রথম ওভারে ২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
পাওয়ার প্লে শেষে আরও ২টি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন সাকিব। এরপর শেখ মেহেদিকে উইকেট ছুঁড়ে দেন নরমান ভারুয়া। ২৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দলটি এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি। চার সোপার ও কিলপিন ডরিগা স্কোরবোর্ডে কিছু রান যোগ করলেও তা দলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারও ব্যাটিং করতে পারেনি পাপুয়া নিউ গিনি। ১৯.৩ ওভারে ৯৭ রানে অল আউট হয় দলটি। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ডরিগা করেন ৪৪ রান। সাকিবের ৪ উইকেট ছাড়াও ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন এবং সাইফউদ্দিন। ৮৪ রানের জয় পায় বাংলাদেশ যা এই ফরম্যাটে দলটির সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার ১২ এ খেলতে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জিততেই হতো তাদের। তাই বাঁচা-মরার ম্যাচে তাই টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য অধিনায়কের সিদ্ধান্তের প্রতিদান দিতে পারেননি নাইম শেখ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কাবুয়া মরিয়ার হাফ ভলি বলকে ফ্লিক করতে গিয়ে সেসে বাউর হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। ০ রানে তিনি ফিরলেও লিটন দাসকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান।
নাইমকে শুরুতে হারালেও সাকিব-লিটনের ব্যাটে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। ৩ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান যোগ করলেও পাওয়ার প্লে’র শেষ ৩ ওভারে আরও ৩০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে এই জুটি। ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৫।
পাওয়ার প্লে বাঁধা পার করতেই যেন ধৈর্য হারিয়ে বসলেন লিটন। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আসাদ ভালাকে উইকেট ছুঁড়ে দেন এই ওপেনারও। ২৩ বলে ২৯ রান করে বিদায় নেন তিনি। তার বিদায়ের পর ক্রিজে নেমে সাকিবকে বেশীক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও।
দলীয় ৭২ রানে আতাইয়ের বলে ৮ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি। এই মুহূর্তে সাকিবকে সঙ্গ দিতে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ১০০ পূরণ করেন অধিনায়ক। তবে ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরির পথে হাঁটার সময় ৪৬ রানে আমিনির অসাধারণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
সঙ্গী হারালেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ আরও চড়াও হয়ে উঠেন পিএনজির বোলারদের ওপর। তার চার-ছক্কার বৃষ্টিতে দ্রুত ১৫০’র দিকে যেতে থাকে বাংলাদেশ। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বাংলাদেশের এই অধিনায়ক।
তবে এরপরই এক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ডেমিয়েন রাভুর ফুল টস বল তার কোমর ছুঁই ছুঁই করছিল কিন্তু ফিল্ডার ক্যাচ লুফে নেয়ায় অপেক্ষা ছিল থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের। শুরুতে স্ক্রিনে নট আউট দেখালেও কয়েক সেকন্ড পরই তা আউট উঠে আসে। ২৮ বলে ৫০ রানে ফেরেন্ত তিনি।
একই ওভারে প্রথম বলে ফেরেন নুরুল হাসান সোহান। ১৮ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১৫৩ রান। তবে সেই ওভারে বাউন্ডারি হাঁকালেও শেষ বলে আউট হন আফিফ। ১৪ বলে ২১ রান করেন তিনি।
শেষ ওভারে সাইফউদ্দিন এবং শেখ মাহেদি মিলে শেষ ওভারে আসে আরও ২০ রান। শেষ দুই বলে জোড়া ছক্কা হাঁকান সাইফউদ্দিন। সঙ্গে ফ্রি হিটে নেন বাউন্ডারি সহ ৫ রান। বাংলাদেশ পায় ১৮১ রানের পুঁজি। ৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফউদ্দিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৮১/৭ (২০ ওভার) (মাহমুদউল্লাহ ৫০, সাকিব ৪৬, আফিফ ২১, সাইফউদ্দিন ১৯*) (কাবুয়া ২/২৬, ভালা ২/২৬)
পাপুয়া নিউ গিনি- ৯৭ (১৯.৩ ওভার) (ডরিগা ৪৬*) (সাকিব ৪/৯)