সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ১০৯৪ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ টাকা ব্যয়ে ৫টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে ৩টি উপস্থাপনসহ) ৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১টি এবং জননিরাপত্তা বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির উপস্থাপিত ৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৫টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১,০৯৪ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৪ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত তথ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন জানাবেন।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ১৬ জুন সিসিজিপি সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রকল্পের ২টি প্যাকেজের নির্মাণ কাজের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি করে মোট ৬টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে একটি প্যাকেজে ২টি এবং অন্য প্যাকেজে ১টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ নং-পিডব্লিউ-৬(১) এর জন্য যৌথভাবে (১) দিবিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড এবং (২) ইলোক্ট্রো গ্লোবাল এবং প্যাকেজ নং পিডব্লিউ-৬(২) জন্য যৌথভাবে (১) এমবিপিএল এবং (২) এটিসিএল এর কাছ থেকে ২টি প্যাকেজের পূর্ত কাজ ১০০ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৩ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, সভায় ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ প্রকল্পের আওতায় ট্যাবলেট ফর সিএপিআই ফর মেইন সেন্সাস ক্রয়ের একটি প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রস্তাবটি পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে।
সভায় বাংলাদেশ পুলিশের জন্য জি-টু-জি পদ্ধতিতে রাশিয়ার নিকট থেকে ২টি হেলিকপ্টার কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রস্তাবটি চলতি বছর গত ৬ অক্টোবর তারিখের সিসিইএ সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন কমিটি কর্তৃক রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান হেলিকপ্টার্স এর সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে এমআই-১৭১এ২ মডেলের ২টি হেলিকপ্টার সংগ্রহ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ ইউরো সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২৮ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৬ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সংশোধিত চুক্তি করা হয়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৭২২.৮৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৬২৫ টাকা ব্যয় হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মে.টন ৭৩৬.৬৭ মার্কিন ডলার হিসেবে সারের মোট দাম ২ কোটি ২১ লাখ ১০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮৯ কোটি ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭০ টাকা ব্যয় হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি)’ প্রকল্পের পণ্য ক্রয় ও পূর্ত কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১১টি জেলায় ১১টি আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণে পণ্যের ৮টি ও পূর্ত কাজের ৫৪ প্যাকেজের ক্রয় কাজ রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদিআরব থেকে ৮ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের দাম নির্ধারণ করে ৮ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মে.টন ৭৪০ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ২ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯০ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।