নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ‘ভিডিও মামলা’ কার্যক্রম চালু করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এতে নগরে যত্রতত্র পার্ক করে রাখা যানবাহনের চালক ও মালিকেরা নড়েচড়ে বসেছিলেন। কিন্তু এখন পুলিশের সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আগের মতোই যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং চলছে। উল্টোপথে চলাচল করছে যানবাহন। এতে সড়কে যানজট লেগে আগের মতোই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে ডিএমপির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিল থেকে এই ধরনের মামলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিগগির ভিডিও মামলা চালু করা হবে। কিন্তু ঠিক কবে চালু হবে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিডিও মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এই মামলার অংশ হিসেবে অবৈধ পার্কিং, উল্টোপথে চলা বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্টরা যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিও করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে না পারলেও জরিমানার চিঠি মালিকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হতো। সে মামলার খবর যেত বিআরটিএর সার্ভারেও। চালক বা মালিক জারিমানা না দিলে ফিটনেস ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ ছিল। এই ধরনের কার্যক্রমকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ‘ভিডিও মামলা’ বলে। এই মামলার কার্যক্রম ডিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগে (ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম) ছিল। তবে করোনার এই সময়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট : গত ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং ভিডিও মামালার কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন প্রতিবেদক। কিন্তু কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে ভিডিও মামলা করতে দেখা যায়নি। অথচ আগারগাঁও, তেজগাঁও, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর রোড, গ্রিন রোড, কারওয়ান বাজার, বেইলি রোড, মতিঝিল, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট এলাকায় অসংখ্য গাড়ি সড়কে যত্রতত্র পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। এতে এসব এলাকার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গত সোমবার মতিঝিলে সিটি সেন্টারের সামনে গাড়ি পার্ক করেন চালক তাজুল ইসলাম। এতে দৈনিক বাংলা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের দিকে যেতে বাধার মুখে পড়ছিল যানবাহন। এ সময় পার্কিং করার কারণ জানতে চাইলে তাজুল জানান, তার বস (গাড়ির মালিক) সিটি সেন্টারে একটা অফিসিয়াল কাজে গেছেন। তার জন্য ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। অথচ ঐ সময় সিটি সেন্টারে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের পেট্রো বাংলা, টিসিবি ভবনের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। এতে আশপাশের সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এসব যানের বিরুদ্ধে ট্রাফিকের কোনো সদস্যকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এই সড়কের চা দোকানি হাফিজ উদ্দিন বলেন, দুই-একদিন পরপরই এই সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় গাড়ির মালিককে পেলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মামলা দেয়া হয়। মালিককে না পেলে রেকার লাগানো হয়। কিন্তু কিছুতেই এই সড়ক অবৈধ পার্কিংমুক্ত করতে পারছে না পুলিশ।
রাজধানীর পান্থপথেও সারিবদ্ধভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। তবে মোটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক ও চালকদের অভিযোগ, নগরে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কারও বাড়ি বা অফিসে গেলে ফটকে নির্দিষ্ট বোর্ডে লেখা থাকে ‘অতিথিদের গাড়ি বাইরে রাখুন’। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কে গাড়ি পার্কিং করতে হয়।
শাহবাগ মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জেন্ট ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, করোনার শুরুর দিকে সাধারণ ছুটির সময় সড়কে যান চলাচল অনেক কম ছিল। তখন কোনো নির্দেশনা ছাড়াই ভিডিও মামলা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবার যানবাহন চলাচল শুরু হলেও ভিডিও কার্যক্রম চালু হয়নি। এখন আগের মতোই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মামলা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মামলা করতে গেলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রায়ই অনেক বড় বড় পদের লোকজনের গাড়ি অবৈধ পার্কিংয়ে থাকে বা উল্টোপথে চলে। সার্জেন্টরা অনেক সময় কিছু বলতে পারেন না। ভিডিও ব্যবস্থার ফলে তাদের কাছে সরাসরি চিঠি চলে যেত।
তাই আবার এই পদ্ধতি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানাবেন বলেও জানান সার্জেন্ট ইকবাল হোসেন।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ দক্ষিণ সূত্র জানায়, আগে নগরে প্রতি মাসে গড়ে ২৫০টি ‘ভিডিও মামলা’ হতো। তখন এই মামলার কারণে নাগরিকদের অনেক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তবে এই মামলার প্রয়োগ বেশি ছিল ট্রাফিক পশ্চিম ও উত্তরে। পূর্ব ও দক্ষিণে তুলনামূলক কম। এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট সার্জেন্টরা নিয়মিত পরিদর্শনের ওপর থাকতেন। তাদের ভিডিও বা ছবি তোলার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ এবং আলাদা ক্যামেরা সরবরাহ করা হয়েছিল।
জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম-কমিশনার বাসু দেব বণিক বলেন, ভিডিও মামলার ফলে নগরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং অনেকাংশেই কমে গিয়েছিল। এখন এই কার্যক্রম অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। শিগগির তা চালু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।