বেনাপোলস্থল বন্দর দিয়ে ভারতে তেল পাচার প্রতিরোধে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহি ট্রাকে তেল পাচার ও সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে তেল পাচারের সংবাদ প্রচার হওয়ায় নড়ে চড়ে বসেছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে প্রবেশ করা ভারতীয় ট্রাকের তেলের ট্যাংকি স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে লিপিবদ্ধ করছে এবং ওই গাড়ি ভারতে যাওয়ার সময় আবারও পরিমাপ করা হচ্ছে। বেনাপোল স্থলবন্দর লিংক রোডে ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্য বাহি প্রতিটি ট্রাক বিজিবি সদস্যরা স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে লিপিবদ্ধ করছে। অপরদিকে বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পের সামনে মালামাল আনলোড করে ভারত ফেরার পথে ওই একই ট্রাক আবারও পরিমাপ করছে বিজিবি সদস্যরা।
এ বিষয়ে হাবিলদার আব্দুল কুদ্দুস জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ট্রাকের তেল পরিমাপ করে লিখে রাখছি। আবার ভারতে যাওয়ার পথে ওই ট্রাক আবারও পরিমাপ করা হচ্ছে। যদি ভারতে যাওয়ার সময় ট্রাকে তেল বেশী পাওয়া যায় তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কোন ট্রাকে তেল বেশী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখনও এরকম কোন কিছু পাওয়া যায়নি। ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ( ট্রাক নং ডাব্লিউ ১৫বি ৬০০৭) শহিদুল্লাহ মন্ডল বলেন, আমরা ভারত থেকে যে তেল নিয়ে আসি তাতে হয়ে যায়। তবে কোন কারনে যদি কম পড়ে যায় তাহলে হয়ত ১০ লিটারের মত তেল সংগ্রহ করি কারোর মাধ্যমে। আর সংগ্রহ করতে না পারলে আমরা বিএসএফ’কে বলে ওপার থেকে তেল নিয়ে আসি। বেনাপোল সীমান্তের একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওপারে তেলে দাম বেশী হওয়ায় ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা গাড়িতে করে তেল পাচার করত। একটি ১০ চাকার গাড়িতে তেল ধরে ৪৫০ লিটার। প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় ৪ শত ট্রাক প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ট্রাক ড্রাইভাররা এদেশের কিছু অসাধু লোকের যোগ সাজসে তেল নিয়ে ভারতে প্রবেশ করত। বর্তমানে বিজিবি নড়ে চড়ে বসায় এসব ট্রাক ড্রাইভাররা এখন তেল নিয়ে যেতে না পরলেও কাঁটাতার পার হয়ে দৌলতপুর, পুটখালী ও অগ্রভুলোট সীমান্ত দিয়ে তেল পাচার হচ্ছে।
এরকম কোন প্রমান আপনার কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চোরাচালানিরা তেল নিয়ে ভারত যায়। তাদের ছবি আমি তুলতে গিয়ে কি মারধর খাব? আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন পার হয় কি না। তবে গত ১৫ অক্টোবর বেনাপোল ২ নং গোডাউনের পাশে বেনাপোল এর একটি চক্র ভারতীয় ট্রাকে ১০ টি কন্টেনারে তেল পাচার করতে দেখা যায়। কেন এ তেল পাচার করছেন এরকম প্রশ্নে তারা বলে আমরা আর করব না। পুলিশকে ফোন দিতে চাইলে তারা দ্রুত ছিটকে পড়ে। এদিকে বেনাপোল এর আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তি বলেন ভারতে যখন তেলের দাম ১০০ টাকা তখন বাংলাদেশে তেলে দাম ছিল ৬৫ টাকা। গত ৩ নভেম্বর যখন বাংলাদেশ প্রতিলিটার ডিজেলের দাম ৮০ টাকা করে তখন ভারতে প্রতি লিটার ৯০ রুপীতে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে তেল পাচার করলে প্রতি লিটারে ১৭ টাকা লাভ হয়। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের একটি চক্র সিন্ডিগেট গড়ে তুলে এই পাচারের সাথে যুক্ত রয়েছে।
বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পের সুবেদার মাহবুব হোসেন বলেন ভারতে কোন সীমান্ত দিয়ে তেল পাচার হতে না পারে তারজন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এবং সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারিও চলছে বিজিবির। আর আমরা গত ৩১ অক্টোবর থেকে আমদানিকৃত গেটে এবং ট্রাক বের হওয়ার গেটে ট্রাক এর তেলের ট্যাংকি স্কেল দিয়ে পরিমাপ করছি। অতিরিক্ত তেল নিয়ে কোন ট্রাক ভারতে প্রবেশ এখনও পর্যন্ত করে নাই। আমরা প্রতিটি ট্রাক এর তেল পরিমাপ করে যাওয়ার পথে আমাদের পুর্বের সীট এর সাথে মিল করাচ্ছি। তাতে করে প্রতিটি ট্রাকে দুই পাঁচ লিটার করে কমই পাচ্ছি