ভারতের বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশের ভোপালের হাবিবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার এই স্টেশনটি রাণী কমলাপতি রেলওয়ে স্টেশন নামে পরিচিত হবে। মধ্য প্রদেশ সরকার এ জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
শনিবার হিন্দি গণমাধ্যম ‘আজতক’ জানিয়েছে, ওই ইস্যুতে এরআগে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছিল মধ্য প্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে রেল স্টেশনের নাম ‘হাবিবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন’ যা পরিবর্তন করে ‘রাণী কমলাপতি রেলওয়ে স্টেশন’ করতে হবে। মধ্য প্রদেশের পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। হাবিবগঞ্জ স্টেশনের নামকরণ রাণী কমলাপতির নামে করার পেছনে রাণী কমলাপতির বীরত্ব ও পরাক্রমের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. শেখ কামাল উদ্দীন আজ (শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘অনেকে বলেন নামে কী আসে যায়! যেমন, বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি-নাট্যকার শেক্সপিয়ার। তিনি বলেন, গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন সে কিন্তু তার সুগন্ধ ছড়াবেই। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন এই মতের তীব্র বিরোধী। নাম নিয়ে তিনি খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন। আসলে নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ইতিহাস, সংস্কৃতি, আভিজাত্য।’
ড. শেখ কামাল উদ্দীন আরও বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার নানাভাবে মধ্যযুগের ও আধুনিক যুগের উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন বিষয়, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থানের নাম পরিবর্তন করে আসছে। তার সাম্প্রতিক উদাহরণ, মধ্য প্রদেশ সরকারের মধ্য প্রদেশের ভোপালের হাবিবগঞ্জ রেল স্টেশনের নাম পাল্টে রানী কমলাপতির নামে নামকরণ করার চেষ্টা। এই রেল স্টেশনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রেল স্টেশন এবং রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য জমি দাতা জনৈক হাবিব মিঞার নাম। এখন হাবিবগঞ্জ রেল স্টেশন নাম উচ্চারিত হলেই হাবিব মিঞার কথা মনে পড়বে, কিন্তু যখন রেল স্টেশনের নাম হবে রানী কমলাপতি তখন হারিয়ে যাবেন হাবিব মিঞা। এইভাবে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এরআগেও আমরা দেখেছি মোগলসরাইসহ একাধিক রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এ ভাবে রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারার মানের কোনো পরিবর্তন আনা যায় না, যা একটি নির্বাচিত কল্যাণকামী সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করি।’
গণমাধ্যমে প্রকাশ, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রস্তাবটি অনুমোদন দিতে চলেছে। শিগগিরি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও হতে পারে বলে জানা গেছে। আগামী ১৫ নভেম্বর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ হাবিবগঞ্জের বিশ্ব মানের রেলওয়ে স্টেশনের উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের পরে ওইদিন তিনি নয়া নামের ঘোষণা করতে পারেন।
এরআগে, ভোপাল লোকসভা আসনের বিজেপি এমপি প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামে হাবিবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের নামকরণের দাবি করেছিলেন।
প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এমপি গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, ১৫ নভেম্বর ভোপালে আদিবাসী গৌরব দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন আমাদের ভোপালের জন্য একটি শুভ লক্ষণ। আমি নিশ্চিত যে মোদিজী হাবিবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের নাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীজির নাম রাখার ঘোষণা করবেন।
প্রসঙ্গত, হাবিব মিয়াঁর নামে এই রেল স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে। আগে এর নাম ছিল শাহপুর। ১৯৭৯ সালে রেলওয়ে সম্প্রসারণের জন্য হাবিব মিয়াঁ তাঁর জমি দান করেন, যার নামানুসারে এই রেলওয়ে স্টেশনের নামকরণ করা হয়।