1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন

জালিয়াতি করে কারারক্ষীর চাকরি, ২০ বছর পর এক চিঠিতে ধরা!

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

মঈন উদ্দিন খানের পরিচয়ে ২০ বছর ধরে কারারক্ষী পদে সিলেট কারাগারে চাকরি করা অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি

জালিয়াতির মাধ্যমে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন খানের পরিচয়ে ২০ বছর ধরে কারারক্ষী পদে সিলেট কারাগারে চাকরি করছেন কুমিল্লার এক ব্যক্তি। এক চিঠি নিয়ে সম্প্রতি এই জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় তদন্তে নেমেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

হবিগঞ্জ জেলা কারাগার ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন খান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে সশরীরে হাজির হয়ে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাকে চাকরির যোগদানপত্র পাঠানো হয়নি। যোগদানপত্র না পাওয়ায় মঈন উদ্দিন খান চাকরির আশা না করে মনতলা বাজারে ফার্মেসী দিয়ে ঔষধের ব্যবসা শুরু করেন।

চলতি বছরের গত ১২ আগস্ট কারারক্ষী ক্রমিক নং-২১৮৬২ মূলে মঈন উদ্দিন খান চাকরি করেন মর্মে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে (স্মারক নং-৫৮০০৪.৯১০০.০৬৬.০১.০০১.২০২১-২২২৪) একটি চিঠি আসে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ওই চিঠি পেয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে মঈন উদ্দিন খানকে অবগত করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র পেয়ে মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী পদে তিনি চাকরি করেন না এবং তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে কে বা কারা চাকরি করছেন, এ বিষয়টি অবগত করার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। যার নং ৮৬০। ‘
এ ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ১৬ নভেম্বর উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনের বরাবর একটি প্রত্যয়ন প্রেরণ করেন। প্রত্যয়নপত্রে তিনি উল্লেখ করেন মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসী ব্যবসায়ী, তিনি কারারক্ষীর চাকরি করেন না। পরবর্তীতে এ চিঠি পেয়ে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক এক পত্রে মঈন উদ্দিন খানকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে মঈন উদ্দিন খান সিলেটের উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের কাছে গিয়ে জানান, তিনি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারারক্ষী পদে চাকুরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চাকুরি লাভের কোন কাগজপত্র পাননি। এ সময় তিনি চাকুরিতে যোগদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন।

এ প্রেক্ষিতে সিলেটের উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য হবিগঞ্জ কারাগারের সুপারকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুয়ায়ী হবিগঞ্জের জেল সুপারের পক্ষে জেইলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা চিঠি ইস্যু করে উভয় মঈন উদ্দিন খানকে (প্রতারকসহ) কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

নির্দেশ অনুযায়ী শাহজাহানপুরের মো. মঈন উদ্দিন খান এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে কারাগারে হাজির হন। সকাল ১০টা থেকে দিনভর মঈন উদ্দিন খান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করেন জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা। কিন্তু মঈন উদ্দিন খানের নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে কুমিল্লার যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তার হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির থাকার নির্দেশনা থাকলেও তিনি কারাগারে হাজির হননি।

এ ব্যাপারে শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান জানান, সরকারি চাকরি করার অনেক আশা নিয়ে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। ভেবেছিলাম আমি চাকরি পাবো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি। যখন আমার কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চিঠি আসে তখনই আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই। এছাড়া জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আমার ঠিকানা ব্যবহার করে যে মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন তিনি আমার ফার্মেসীতে এসে আমাকে ২ লাখ টাকা দিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। তবে কিভাবে জালিয়াতি করা হয়েছিল এ ব্যাপারে কথিত মঈন উদ্দিন খানকে জিজ্ঞাসবাদ করলে তিনি আমাকে বলেছেন, নিয়োগ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে যোগদানপত্রে আমার ছবি পরিবর্তন করে তার ছবিসহ জাল কাগজ ব্যবহার করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে জেলার মো. জয়নাল আবেদীন ভূঞা জানান, গতকাল তদন্তকালে অভিযুক্ত কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান ও শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান হাজির হওয়ার কথা থাকলেও যে মঈন উদ্দিন খান চারি করছেন তিনি হাজির হননি। কিন্তু শাহজাহানপুরে মঈন উদ্দিন খান তার কাগজপত্র নিয়ে কারাগারে হাজির হয়েছেন। আমরা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার সাথে আসা এলাকার কয়েকজন মুরুব্বীয়ানের বক্তব্য নিয়েছি। এ বিষয়টি আরো তদন্তের স্বার্থে আমি সরেজমিনে শাহজাহানপুর এলাকায় যাবো। পরবর্তীতে আমার তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবো। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি