নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নতুন সহায়তা শিল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. রুবানা হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ বছরের মার্চ-জুলাই পর্যন্ত তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রফতানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবারও হুমকির মুখে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে পোশাক শিল্পের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। এ জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এককভাবে উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সম্পৃক্ততা ও চাপ অব্যাহত রেখে কাজ করছি। তারপরও শিল্পের সুরক্ষায় এই মুহূর্তে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’
বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, ‘গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এবার একই সময়ে রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর নভেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ, যা এই শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে নতুন সহায়তা প্রদান শিল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এই শিল্পের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
তার মতে, ‘প্রধান বাজারগুলোতে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রফতানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অক্টোবরে আবারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব হিসেবে আমরা দেখছি। চলতি বছরের অক্টোবরে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমাদের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপানে পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ।’
সংবাদ সম্মেলনে রুবানা হক বলেন, ‘ব্যবসা পরিস্থিতি, বিশেষ করে ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্যাদি পাওয়ার জন্য ১৯ মার্চ আমরা একটি অনলাইন পোর্টাল খুলি, যেখানে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিতের তথ্য প্রদান করে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ এক হাজার ১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এ পোর্টালে ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতে (বিজিএমইএ) এর সভাপতিকে তথ্য প্রদান করে, যার মাধ্যমে ৬৫টি দেশের প্রায় এক হাজার ৩০০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য পাওয়া যায়।’
‘ওই সময়ে আমরা আরেকটি পোর্টালও খুলেছিলাম, শুধু ওই সব কারখানার জন্য, যেগুলো দেউলিয়াত্ব-ঘোষিত ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের ব্যবসার যাবতীয় তথ্য পোর্টালে শেয়ার করতে পারে। মাল্টি-স্টেকহোল্ডার অ্যাপ্রোচের ভিত্তিতে বিজিএমইএ’ মাধ্যমে ক্রমাগত যোগাযোগ ও চাপ সৃষ্টির ফলে জুন-আগস্টে বাতিল করা ক্রয়াদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ পুনর্বহাল সম্ভব হয়, যদিও কারখানাগুলোকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল ক্রেতাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক ধরে রাখা।’—বলেন রুবানা হক।
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে লকডাউনের প্রভাবে খুচরা বিক্রি ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমছে, যার প্রভাবে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি ও রফতানি মূল্য উভয়ই কমছে। বিগত কয়েক মাসে ইউরোপে খুচরা বিক্রয় হ্রাসের হার কিছুটা কমে, অর্থাৎ আগস্টে মাইনাস ৫ শতাংশ হয়, যা সেপ্টেম্বরে দাঁড়ায় মাইনাস ১৩ শতাংশে।’