রাজধানীতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিয়মিত অভিযান চললেও কোনোভাবেই পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না। চালক ও হেলপাররা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। এ নিয়ে নিয়মিত যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে। কখনও কখনও এই বিতণ্ডা রূপ নিচ্ছে হাতাহাতিতে। অনেক চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে। দাবিকৃত ভাড়া না দেওয়ায় বাস থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও সাধারণ যাত্রীদের। এসব নিয়ে নিয়মিত আন্দোলনও হচ্ছে রাজধানীর সড়কে।
বিআরটিএ বলছে, প্রতিদিন সংস্থাটির নিয়মিত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে সোমবার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত তিন হাজার ৩৪৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে জরিমানা করা হয়েছে ৭৮ লাখ ২১ হাজার ৪০০ টাকা। একইসঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও ভিজিলেন্স টিম সড়কে কাজ করছে। কিন্তু এত কিছুর পরও কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে ধরা পড়ছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, সরকারি তালিকানুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। দেদার চলছে সিটিং সার্ভিসও। মালিক-শ্রমিক- মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া ইচ্ছেমতো আদায় করছে। বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে মালিকদের মর্জিমতো ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে নেওয়া হচ্ছে তিন-চার গুণ বাড়তি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বার বার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঁঠা হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। নানা অনিয়ম, অযৌক্তিক ও ভুয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে তারা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার জ্বালানি তেলে ৭ বছরে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সেটা টাকা দিয়ে ২০ বছর জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেওয়া যেতো। পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি দামে সড়ক, সেতু নির্মাণ ও বেশি দামে কেনাকাটার অর্থ যোগান দিতে তেলের দাম বাড়িয়ে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার।
নগরীতে এখনও বিভিন্ন স্থানে ওয়েবিলের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। মঙ্গলবারও (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় শিকড় পরিবহনের কয়েকটি বাসে ওয়েবিল আদায় করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে কয়েকজন যাত্রী বাকবিতণ্ডা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ওয়েবিল অনুযায়ী মিরপুর-১০ থেকে কাওরানবাজার পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা। কাওরানবাজার সিগনাল পার হলেই ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় আরও দশ টাকা। ফলে বাংলামোটর বা শাহবাগ নামলেও যাত্রীকে দিতে হচ্ছে ২৫ টাকা। যেখানে ওয়েবিল সই হয় সেখানেই যাত্রীরা নামতে বাধ্য হন।
জানতে চাইলে মিরপুরের বাসিন্দা সালাম মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত এলে চালক-হেলপার সাধু সেজে যায়। এরপর আবার আগের মতোই। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে পয়সায়। তারা আদায় করে টাকায়। ওয়েবিলের নামে অল্প পথে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। গাড়ি সিএনজিতে চললেও লিখে রাখছে ডিজেলচালিত।
বিআরটিএ’র নতুন চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিন আমাদের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কোথাও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়ে আমাদের অবস্থা কঠোর। কোনওভাবেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, আমরা মনিটরিং করছি। এরপরও কোনও কোনও মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। সড়কে আমাদের মনিটরিং টিম ছাড়াও বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে।