দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর বাড়তি সতর্কতা জারি এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার পদক্ষেপ নিয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভাইরাসটির এ ধরন টিকা প্রতিরোধী। অর্থাৎ ভাইরাসের এ ধরনের ক্ষেত্রে করোনা টিকা কার্যকর নাও হতে পারে।
শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার আশপাশের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি, যে ব্রিটিশ যাত্রীরা গত কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা বা তার পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরেছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলেছে দেশটির সরকার।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মূল প্রশাসনিক শাখা ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান নির্বাহী উরসুলা ভন ডারলেনও এক আদেশে ইইউভুক্ত সব দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা সব ফ্লাইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে বি.১.১৫২৯ নামে করোনাভাইরাসের একটি নতুন রূপান্তরিত ধরন। ইতোমধ্যে ২২ জন ধরনটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, মূল করোনাভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি- এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও হংকং ও বতসোয়ানায় করোনার নতুন এই ধরনে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে জেনেভায় বৈঠকে বসেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা। বৈঠক শেষে সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিন লিন্ডমিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রূপান্তরিত এ ধরন সম্পর্কে যেসব তথ্য বর্তমানে আমাদের হাতে রয়েছে, সেসব বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করার জন্যই বৈঠক ডাকা হয়েছিল।’
‘সাধারণ নাকি উদ্বেগজনক- কোন ক্যাটাগরিতে ধরনটিকে ফেলা যাবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট তথ্য এ মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। তবে তথ্য সংগ্রহের জন্য ডব্লিউএইচওর তৎপরতা অব্যাহত আছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর যাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইতালি। পাশাপাশি যে ইতালীয় যাত্রীরা বর্তমানে সেসব দেশে অবস্থান করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ ছাড়া জার্মানি সরকারিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘রূপান্তরিত ভাইরাসের এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান ও সিঙ্গাপুর যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে ফ্লাইট আসার বিষয়ে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এক সময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র ও বর্তমানে চীনের অধিকৃত দ্বীপ তাইওয়ান অবশ্য এত কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে শুক্রবার এক আদেশে তাইওয়ানের সরকার জানিয়েছে, যে যাত্রীরা দক্ষিণ আফ্রিকাসহ তার আশপাশের দেশগুলো থেকে তাইওয়ানে আসবেন, তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।