নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দুর্নীতি রুখতে এই দিবসের আয়োজন থেকে তরুণদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বক্তারা বলেছেন, সব স্তরে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি রোধ করতে তরুণদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা: দুর্নীতি থামাও, জীবন বাঁচাও’- এই প্রতিপাদ্যে নিয়ে বুধবার জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন করেছে টিআইবি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় পর্যায়ে টিআইবির অনুপ্রেরণায় ৪৫টি অঞ্চলে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক (স্বজন), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এবং ইয়েস ফ্রেন্ডস গ্রুপের আয়োজনে অনলাইনে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১১টায় অনলাইনে ‘দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তারুণ্য: কার্টুন ও চিত্রশিল্প’ শীর্ষক একটি আলোচনা এবং ১৫তম দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ঘোষণা ও অনলাইন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. পারভীন হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় আলোচনায় অংশ নেন টিআইবি’র ন্যায়পাল ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এবং লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার খান।
স্বাগত বক্তব্যে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আজ (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হলেও টিআইবির জন্য প্রতিটি দিনই দুর্নীতিবিরোধী দিবস। তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে যেসব মাধ্যম ব্যবহার করে টিআইবি দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার মধ্যে সাংস্কৃতিক মাধ্যম অন্যতম। কবিতা, গান, গল্প, নাটিকা, সংস্কৃতি মেলার পাশাপাশি ২০০৬ সাল থেকে কার্টুন প্রতিযোগিতা এই মাধ্যমের প্রধানতম অনুষঙ্গ, যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।’
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হলে এটি শুধু পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করলেই হবে না, এটি দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ করতে হবে। তাই ছবি বা কার্টুন আঁকার মধ্য দিয়ে তরুণরা যখন এই দায়িত্বটা নিয়ে নেয়, তারা শুধু নিজেরাই অংশগ্রহণই করে না বরং পরিবারের সবাইকে অংশগ্রহণ করায়, বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।’
কার্টুনিস্ট শাহরিয়ার খান বলেন, ‘টিআইবির কার্টুন প্রতিযোগিতা এখন অনেক বেশি ছড়িয়ে গেছে। এই প্রতিযোগিতায় ১৩ বছরের বাচ্চা থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটায়। এক্ষেত্রে টিআইবির স্বার্থকতা হলো- তরুণদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা একটি সাড়া তৈরি করতে পেরেছে।’
অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা শুধু কার্টুন আঁকাই নয়, বরং এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করছে। এই সচেতনতা পাঠ্যবই পড়ে হয় না। এর জন্য সংস্কৃতি দরকার, পারিবারিক শিক্ষা দরকার, চোখ-কান খোলা রাখা দরকার। দুর্নীতি যে খারাপ বিষয়, তা কার্টুনের মাধ্যমেই একজন কার্টুনিস্ট তুলে ধরেন। অনেক জরুরি বিষয় লিখে যতটা বোঝানো যায়, তা কিন্তু কার্টুনের ভাষায়, ছবির ভাষায় ৮০ শতাংশ মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝানো সম্ভব।’
সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘দুর্নীতি যে করছে, তার পেছনে একটি দুর্নীতিবাজ মন কাজ করছে। আমাদের সমাজ দুর্নীতির প্রতি অনেক বেশি সহনশীল। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে তারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করছে। আমরা চাচ্ছি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু এই গণতন্ত্রের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে চলে যাচ্ছে। এখানে সমাজ কোনো রকম ছাঁকনির কাজ করছে না। এখানে সুনীতি ও দুর্নীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান বলেন, ‘একটি জাতি কতটুকু সভ্য তা তাদের শিল্পকলার চর্চা থেকে বোঝা যায়। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়াতে হবে। তাই তরুণদের ছাড়া দুর্নীতির বৃত্ত থেকে আমাদের বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।’
আলোচনা শেষে টিআইবির ১৫তম দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০২০-এর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।