নতুন বছরের শুরুতেই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হয়ে গেছে। এতে লেনদেন তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে গেছে।
সূচক ও লেনদেনের বড় উত্থান হওয়ার পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এক ডজন কোম্পানির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এমনকি লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই ১২ প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের শেয়ার দাম সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরপরও দিনের পুরোটা সময় এসব কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতার ঘর খালি পড়ে থাকে।
এর আগে নতুন বছরের প্রথম পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এতে বছরের প্রথম সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ২৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর বাজার মূলধন বাড়ে ১৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কিছুটা দরপতন হয়। ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। অবশ্য দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার আবার বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৬১ পয়েন্ট।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই বড় উত্থান প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি দুপুর ১টার দিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।
তবে লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। এতে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতাও কমে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ৪৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক গত বছরের ১১ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসলো।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৬২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটলো। গত বছরের ৭ অক্টোবর ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারটিতে আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
বড় অঙ্কের লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির। আর ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ৩৫টির। এর মধ্যে ১২টি কোম্পানির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
এই ১২ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- তিতাস গ্যাস, ইস্টার্ণ কেবলস, ন্যাশনাল টিউবস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আরএকে সিরামিক, ওসমানীয়া গ্লাস, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, বসুন্ধরা পেপার, এসআইবিএল, বিবিএস কেবলস, ইফাদ অটোস এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হলেও বেশিরভাগ সময় বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে ছিল।
এদিকে সূচকের বড় উত্থানের বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ১২২ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৭২ কোটি ৬১ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তিতাস গ্যাস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, জিপিএইচ ইস্পাত, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, জিএসপি ফাইন্যান্স এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।