ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক বা অভিভাবকের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকলে তারা ছাত্র-ছাত্রী বা সন্তানের জন্য প্যারেন্টাইল গাইডেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারবেন।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহজাবিন হক, টিআইসির অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক এবং আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক ও শিশু প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন খাতের বক্তারা বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানভাণ্ডার হচ্ছে ইন্টারনেট। জ্ঞানের এ জগত থেকে শিশুদের দূরে রেখে তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না। তবে তাদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে হবে।
ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্য সম্পর্কে অসচেতনতা কাম্য হতে পারে না। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তথ্যযুগে অসহায়ভাবে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার ন্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে বাবা-মাকে অধিকতর যত্নশীল হতে হবে। একইভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগতটাকে যথাযথভাবে গাইড করবেন।
তিনি বলেন, যে অবস্থায় আমরা এখন বসবাস করছি আগামী ১০ বছর পর সে অবস্থা থাকবে না। আগামী দিনের প্রযুক্তি হবে বিস্ময়কর। পঞ্চম শিল্প যুগের প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের ৭০ ভাগ তরুণ জনগোষ্ঠীকে তৈরি করতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে অত্যন্ত মেধাবী মনে করে তিনি বলেন, নতুনদের সঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে তারা বিস্ময়করভাবে সফল হবে। আমরা যতবেশি ডিজিটাল হই তারপরও শিশুদের বিকাশে খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ লাগবেই।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদের ডিজিটাল যন্ত্র থেকে সুরক্ষায় যে কোনো সুপারিশ ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে আয়োজকদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
নিরাপদ ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ২২ হাজার পর্নোসাইট ও দুই হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। ফেসবুক, ইউটিউব এবং টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করার জন্য ভূমিকা রাখছি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে ক্ষতিকর কনটেন্ট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী প্রতিটি আইনের মতোই ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল অপরাধ দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন না করে কোনো উপায় ছিল না। সভ্য সমাজে আইন তো থাকতেই হবে। সব মহলের মতামত নিয়ে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করতে এ আইন একবারও ব্যবহার করা হয়নি।
বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো গর্হিত কাজ। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সমন্বয়কারী অম্বিকা রায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা গোলাম মনোয়ার কামাল।