একেকটি আন্ডার চেকিং মিররের বাজারদর মাত্র ৫০০ টাকা। কিন্তু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ৫০০ টাকার সেই চেকিং মিরর ক্রয় করেছে ৫০ হাজার ৪০০ টাকা দরে। ২০টি আন্ডার চেকিং মিরর ক্রয় করা হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকায়। কেবল আন্ডার চেকিং মিররই নয়, মাত্র ১৫০ টাকার একেকটি ট্রাফিক বাটনের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৭ হাজার টাকা করে। ২০টি রিচার্জেবল ট্রাফিক বাটন ক্রয় হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়, যার বাজারমূল্য মাত্র ৭ হাজার টাকা। ২৭ ইঞ্চি দুটি এলইডি মনিটর ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকায়, যার বাজারমূল্য ৮ হাজার টাকা। এমন অস্বাভাবিক দরে কেনাকাটার অভিযোগ উঠেছে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগ) মো. শামীমুল হক ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইদুল ইসলাম নির্দিষ্ট কয়েকজন ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত পণ্যর মূল্য বেশি দেখিয়ে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন। প্রকৌশলীদের ঘনিষ্ঠ নির্দিষ্ট চারটি কোম্পানি সিকিউরিটি ম্যাটেরিয়াল ক্রয় করে এ অবৈধ অর্থ আত্মসাৎ করে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জননী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইজ, শহীদ অ্যান্ড বাদ্রার্স ও ইকন ইঞ্জিনিয়ারিং।
সিকিউরিটি এবং কেবল যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৯ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগে। অভিযোগ রয়েছে, এ বরাদ্দের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ করে প্রকৌশলীঘনিষ্ঠ উল্লিখিত চারটি কোম্পানি।
জানা যায়, গত বছরের ১০ মে চারটি টেন্ডারের মাধ্যমে এসব কেনাকাটা করে। কেনাকাটার এমন অস্বাভাবিক দরের সত্যতা যাচাই করতে বিভিন্ন সিকিউরিটি পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন কম্পিউটার মার্কেট ও গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজার এলাকায় সিকিউরিটি পণ্যর পাইকারি বাজার ঘুরে দাম যাচাই করা হয়। এতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন অস্বাভাবিক কেনাকাটার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানের তথ্যমতে, মাত্র ২৫০ টাকার একেকটি ট্রাফিক বাটনের বাজারমূল্য দেখানো হয় ৭ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ ৩২টি রিচার্জেবল ট্রাফিক বাটন ক্রয় হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকায়, যার বাজারমূল্য মাত্র ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৫০০ টাকা মূল্যের ২০টি আন্ডার চেকিং মিরর ক্রয় দেখা হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০টি চেকিং মিররের প্রকৃত বাজারমূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা।
ডাবল হুকের ২৬টি সেফটি বেলের মূল্য দেখানো হয় ৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। যদিও প্রতিটি ডাবল হুকের প্রকৃত বাজারমূল্য দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের ১০ কয়েল নেটওয়ার্ক ক্যাবলের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, যার প্রকৃত বাজারমূল্য মাত্র ৩৬ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ৪০০ টাকা মূল্যের নয়টি সেফটি হেটমেট ক্রয় করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকায়, যার প্রতিটি হেলমেটের বাজারমূল্য ৪০০ টাকা।এদিকে দুটি এনভিআর (নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার) ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, যার প্রকৃত বাজারমূল্য ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা। আর মাত্র ১৪ হাজার টাকার দুটি ৪টিবি স্টোরেজ হার্ডডিস্ক ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকায়। এ ছাড়া চার পোর্টের দুটি সুইচ ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকায়, যার প্রকৃত বাজারমূল্য ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর আট পোর্টের দুটি সুইচ ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকায়, যার প্রকৃত বাজারমূল্য ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১৫ কয়েল নেটওয়ার্ক ক্যাবল ক্রয় করা হয়েছে প্রতি ক্যাবল ৭০ হাজার ২০০ টাকা দরে ১০ লাখ ৫৩ হাজার টাকায়। অথচ প্রতি কয়েল ক্যাবল প্রকৃত বাজারমূল্য ৪ হাজার টাকা।
২৭ ইঞ্চি দুটি এলইডি মনিটর ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকায়, যার বাজারমূল্য ৮ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি টু হোয়েল ট্রলি ক্রয় করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায়। আর ৩ হাজার টাকা মূল্যের ৪৩টি স্ক্যানার ক্রয় করা হয়েছে ৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকায়।
এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপক-সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পণ্যে এমন অস্বাভাবিক দর দেখিয়ে কেনাকাটা করা হয়েছে, যা প্রকৃত বাজারমূল্যের চাইতে অনেক গুণ বেশি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংগ্রহ ও সংরক্ষণ) মোহা. শামীমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার অফিসে এবং মোবাইল ফোনেও চেষ্টা করা হয়। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
তবে সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর আমাদের সময়কে বলেন, এখনো বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা এটি অফিসিয়ালি প্রকিউরমেন্ট করেছে তাদের থেকে জানুন। আমি বিষয়টি অফিসিয়ালি দেখব।