প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে উপযুক্ত ১০ জন ব্যক্তির সন্ধানে সার্চ কমিটির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া নামের প্রস্তাবের বাইরে থেকেও যোগ্য ব্যক্তি খুঁজছে কমিটি। এদিকে প্রাথমিকভাবে সার্চ কমিটি ৫০ জনের নাম বাছাই করেছে। আগামী শনিবার এই তালিকা নিয়ে আবারও বৈঠকে বসবে তারা। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে গতকাল বিকাল পৌনে ৫টায় শুরু হয়ে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক। বৈঠকে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যক্তিগত পর্যায় এবং বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পাওয়া নামের তালিকা উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ৩২২ জনের তালিকা থেকে একাধিকবার আসা নাম বাদ দেওয়ার পর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১৫ জনে। নামের বানানে থাকা ভুলগুলোও সংশোধন করা হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, এ তালিকা থেকে সার্চ কমিটি প্রাথমিকভাবে ৫০ জনকে বাছাই করেছে। এখন এই ৫০ জনের জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা করা হবে। তাদের মধ্যে যাদের পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত পাওয়া যায়নি, তাদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তালিকার বাইরেও যদি উপযুক্ত কোনো ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য থাকে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কমিটির সদস্যদের অনুরোধ জানিয়েছেন সার্চ কমিটির প্রধান।
সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। এর আগে গত শনি, রবি ও মঙ্গলবার চার দফায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এসব বৈঠক থেকে সৎ, যোগ্য ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করার পরামর্শ দেওয়া হয় সার্চ কমিটিকে।
গতকালের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, অনুসন্ধান কমিটি বসেছিলেন। তাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে এবং আগামী শনিবার বেলা ১১টায় আবার বসবেন। আর কোনো বিষয় আমি বলতে পারব না।’
বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে ‘আইনানুগভাবে যে যোগ্যতার কথা বলা আছে সে অনুযায়ীই হবে।’ প্রস্তাবিত নামের মধ্যে যারা নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
ব্যাপক আলোচনার মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হওয়ার পর ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ১২ দিনে নিজেরা চার দফা এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে চার দফা বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। প্রথম দুই বৈঠকের পরই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে প্রস্তাব আহ্বান করে। এবারই প্রথম ব্যক্তিগতভাবে নিজের নাম নিজে প্রস্তাব করার সুযোগও রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে নিবন্ধিত দুই ডজন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছয় পেশাজীবী সংগঠন নাম প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও অনেক নাম প্রস্তাব জমা হয়েছে কমিটির কাছে। গত সোমবার প্রস্তাব পাওয়া নামের তালিকা প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। এখন সুপারিশ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। আইন অনুযায়ী এই সার্চ কমিটির হাতে সময় রয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অন্যদিকে কে এম নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার পর এখন নির্বাচন কমিশন শূন্য রয়েছে।