বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন সুবিধার বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এই পেনশন সুবিধা চালু করা হবে। সেজন্য আইন ও বিধি তৈরি করা হবে এই সময়ের মধ্যেই। একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে তার অধীনে চলবে এই পেনশন সুবিধা।
এর আওতায় নিবন্ধিতরা ৬০ বছরের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ভোগ করতে পারবেন। যাদের বয়স এখন ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, আপাতত তাদের এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেন সার্বজনীন পেনশন
সংবিধানের ১৫ ঘ অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রী বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে অভাবগ্রস্ত হলে তাদের অভাবের কারণে যাদের সাহায্য প্রয়োজন, তাদের সাহায্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই আলোকে এই পেনশন স্কিম নেওয়া হচ্ছে।
ষাটোর্ধ্ব সবার পেনশনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
সব নাগরিককে পেনশন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
কত টাকা পেনশন দিলে মানুষ ‘অলস হবে না’, জানতে চায় সরকার
শতভাগ পেনশন নেওয়া অবসরপ্রাপ্তের স্বামী-স্ত্রীও পাবেন সুবিধা
বেসরকারি খাতে পেনশন সরকারের এ মেয়াদেই
পেনশন সুবিধার প্রস্তাবে যা আছে
>> ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক এই পেনশন সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিষয়ে পরে বিবেচনা করা হবে, কারণ এখন তারা সরকারিভাবেই একটি পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আছেন।
>> জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এটা হবে ঐচ্ছিক। পরে তা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
>> ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা দিলে সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন একজন। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
>> সুবিধাভোগীর বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। তা না হলে তাদের হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। পরে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা পরিশোধের মাধ্যমে হিসাব সচল হবে।
>> পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা (৬০ বছর) পূর্ণ হলে পেনশন তহবিলে পুঞ্জিভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিতহারে পেনশন দেওয়া হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে এই পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
>> নির্ধারিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালে ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি সেই মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। মূল জমাকারীর বয়স যে বছর ৭৫ বছর পূর্ণ হত, ওই বছর পর্যন্ত নমিনিকে এই পেনশন দেওয়া হবে।
>> পেনশন স্কিমে জমা করা অর্থ কোনোভাবেই কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
>> কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই নিবন্ধিত চাঁদাপ্রদানকারী মারা গেলে জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
>> পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। পেনশন বাবদ মাসিক যে অর্থ পাওয়া যাবে তা পুরোপুরি আয়কর মুক্ত থাকবে।
>> পেনশন কর্তৃপক্ষের খরচসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় সরকার বহন করবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা অর্থ নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে এবং সর্বোচ্চ লাভের ব্যবস্থা করবে।
মন্ত্রী বলেন, এটা হচ্ছে প্রাথমিক প্রস্তাব, এর সঙ্গে আরও বাস্তবসম্মত সংশোধন ও পরামর্শ যুক্ত হবে।
“যখন একটা সময় আসবে, দেখা শোনা করার কেউ থাকবে না। তখন এই স্কিমটি কার্যকর হিসাবে বিবেচিত হবে।”
আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরুর আশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আইন করব, আইনের মধ্যেই সব কিছু থাকবে। আইন ও বিধি একসাথেই প্রণয়ন করা হবে। এরপরে বাস্তবায়নকালীন সময়ে প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যাবে।