সোনালী ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা খরচের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে তার ব্যাংক হিসাবের বিভিন্ন তথ্য কয়েকটি ব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে।
এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মামলার তদন্ত শুরু করে দুদক।
সূত্র জানিয়েছেন, আতাউর রহমান প্রধান যখন রূপালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচিতও হন। তবে ঐ নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা খরচ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া অর্থ পাচার, ঋণ পুনঃতপশিলকরণে কমিশন আদায়সহ তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানের সোনালী ব্যাংকের এমডি থাকা অবস্থাতেও আতাউর রহমান প্রধান নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ—স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকপ্রীতি। এমডির বাড়ি উত্তরবঙ্গে হওয়ায় তিনি ‘উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন। আর এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে চলছে বদলিবাণিজ্য, প্রমোশন-বাণিজ্য, সিএসআর, স্পন্সর ও বিজ্ঞাপন থেকে নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ার বাণিজ্য। সোনালী ব্যাংকের প্রভাবশালী ডিভিশনগুলোর প্রায় সবগুলোর প্রধানই এখন উত্তরবঙ্গের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বঞ্চিত এসব কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকার পরও আমাদের অন্যায়ভাবে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন যোগ্য কর্মকর্তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পারছে না।’
তবে স্বজনপ্রীতির ক্ষেত্রেও তিনি মানছেন না কোনো নিয়ম। সম্প্রতি এমডির এক ভাগ্নে জামাই নবাব হোসেনকে কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সোনালী এক্সচেঞ্জ কোং ইনকঃ, যুক্তরাষ্ট্র শাখায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। আরেক ভাগ্নে জামাই মো. সাইফুল ইসলামকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবের জেদ্দা শাখায়। এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার বিধান থাকলেও তাদের ক্ষেত্রে কিছুই দেখা হয়নি।
সূত্রমতে, আতাউর রহমান প্রধান ব্যাংকিং নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা কমিশন নিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এতে ক্ষতিতে পড়েছে ব্যাংক। সেই টাকা পাচার করে তিনি বিদেশে কিনেছেন বাড়ি। এজন্য রূপালী ব্যাংকের কাছে বেশ কিছু নথিপত্র চেয়েছে দুদক। তার মধ্যে রয়েছে ঢাবির সিনেট নির্বাচন উপলক্ষ্যে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অফিস আদেশ ও নির্বাচন উপলক্ষ্যে খরচের বিল, খুলনা শাখার গ্রাহক ক্রিসেন্ট জুট মিল এবং স্থানীয় শাখার গ্রাহক বিউটিফুল জ্যাকেট ও দি বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসের সব ধরনের নথিপত্র। এ ছাড়া আতাউর রহমান প্রধান এমডি থাকাকালে রূপালী ব্যাংকে যত কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে, সেই নথিও চেয়েছে দুদক।
আতাউর রহমান প্রধান প্রায় ছয় বছর ধরে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের এমডি পদে দায়িত্ব পান। পরে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নতুন করে তিন বছরের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পান তিনি। দেশ জুড়ে ও দেশের বাইরে সোনালী ব্যাংকের প্রচুর শাখা ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। দেশের মধ্যে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে সোনালী ব্যাংক। সেজন্য এ ব্যাংকটির গুরুত্ব অনেক বেশি। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটি যে ইমেজ সংকটে পড়েছিল তা এখনো পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।