বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বেসরকারি খাতের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও দক্ষতার কারণে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আগামী দিনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ আয়োজনে ‘বুস্টিং বাংলাদেশ ট্রেড কমপিটিটিভনেস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। দীর্ঘসময় ধরে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। করোনা মহামারিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে গেলেও এখন তা পুনরুদ্ধার হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিবহণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ট্রেড ফ্যাসিলিটি সিস্টেম, গ্লোবাল ভ্যালু চেইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নতি করার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে দেশের বড় সাফল্য দারিদ্র্য নিরসন। সম্পদের সুষম বণ্টনের উদ্যোগ চলছে। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ফলে রপ্তানি খাত দ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
পিআরআই চেয়ারম্যাণ জাইদী সাত্তারের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমান, সাবেক বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন এবং পিআরআইএর গবেষণা পরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. নোরা ডিহেল এবং ড. ক্যাসিলা ল্যাকটোস।
বক্তারা বলেন, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বাড়াতে রপ্তানিপণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি ক্ষেত্রে শুল্কবাধা দূর করা, কাস্টম ডিউটি ও রেগুলার ডিউটি কমানো, দক্ষতা জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
তারা বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বকে প্রমাণ করে দেখিয়েছে এটি একটি উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য করতে সক্ষম দেশ। বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলনামূলক ভালো। কেননা পোশাক রপ্তানিতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে সুবিধা তৈরি করেছে তুলনামূলকভাবে শ্রমনির্ভর কার্যকলাপ এবং আমাদের সস্তা ও স্বল্প-দক্ষ শ্রম। কিন্তু এই সুবিধা বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে। আগামী দশকে অনেক পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসবে। তাই এখনকার অনেক সুবিধাই থাকবে না। এজন্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশষ নজর দিতে হবে।
‘এছাড়া বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই পোশাকখাত নির্ভর, যা আগামীতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এজন্য অন্য শিল্পগুলোর উন্নয়নে পোশাকশিল্পের মতোই সুবিধা দেওয়া দরকার। যেমন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধশিল্প, প্রযুক্তিপণ্যসহ সম্ভাবনামসয় শিল্পগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। সেই সঙ্গে রপ্তানিবাজার বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি ট্যারিফ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএসহ বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। পাশাপাশি জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে।’ যোগ করেন তারা।