ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু করার পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় একশ ডলার বেড়ে গেছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বাংলাদেশেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে বিশ্ববাজারে যে দামের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে সেটি (বিশ্ববাজারে দাম) আরও বেড়েছে। গত দুদিনে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ৫০ ডলার বেড়ে গেছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বাংলাদেশে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) দায়িত্বশীলরা এমনই আভাস দিয়েছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। হামলা শুরুর পর ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইউক্রেন থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর পরই বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামে বেশ অস্থিরতা দেখা দেয়। এ তালিকায় রয়েছে দামি ধাতু স্বর্ণও।
সবশেষ এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ৮২ দশমিক ৪৮ ডলার। এতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭০ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে উঠে এসেছে। এর মধ্যে শেষ কার্যদিবসেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮৬ ডলার বা ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম তিন হাজার ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৮ হাজার ২৬৫ হাজার টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ৭৬৬ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪২১ টাকা।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস, যা কার্যকর হয় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। সে সময় সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৮৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭১ হাজার ৬৭৫ টাকা করা হয়। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮১৪ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬১ হাজার ৮১৯ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২৯১ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৫১ হাজার ২০৫ টাকা।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যে দেশের বাজারে দু’দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলো। তবে আবারও যে কোনো মুহূর্তে বাড়তে পারে এই দামি ধাতুটির দাম। এমন আভাস দিয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারের যে দামের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে, ইতোমধ্যে দাম তার থেকে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সুতরাং বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য যে কোন সময় বাংলাদেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা এখনো দেখা যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে স্বর্ণের পাশাপাশি গেল এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপা ও প্লাটিনামের দামও বেড়েছে। গেল এক সপ্তাহে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬৭ ডলারে।
আর এক দামি ধাতু প্লাটিনামের দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২১ দশমিক ৩৪ ডলার।