দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করার পথ খুঁজতে ধারাবাহিক সংলাপে বসছে নতুন নির্বাচন কমিশন।
১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথম সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন। ওই দিন বিকাল ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ সংলাপ হবে। এরপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করার চিন্তা করছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিগত তিনটি নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। সব শেষ কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সংলাপে ৫০টি সুপারিশ এসেছিল, এর মধ্যে বেশিরভাগ সুপারিশই আমলে নেওয়া হয়নি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শপথ নেয়। যদিও নতুন কমিশন এখনো আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেনি। তবে দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা নতুন কমিশনের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, গত দুটি কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রমুখী হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তারা বলছেন, আস্থার সংকট নিরসন করা নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংলাপ আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু-সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সেই পরামর্শ নিতে ধারাবাহিকভাবে আমরা দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সংলাপে বসব। ইসি সূত্র জানায়, শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এবং কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১৩ মার্চ প্রথম সংলাপে ৩০ জনের বেশি শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেককেই আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পাওয়া শিক্ষাবিদের তালিকায় রয়েছেন শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্য। ইসি সূত্র জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন ভবনে অফিস শুরু করে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৩ মার্চ সুশীল সমাজ বা শিক্ষাবিদদের প্রতিনিধি নিয়ে এই সংলাপ শুরু হতে পারে। পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই সংলাপ পর্ব। একজন ইসির যুগ্ম-সচিব বলেন, সংলাপের বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ট্রেডিশনালি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। ২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, পরে ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন মেয়াদকালে দুইবার সংলাপে বসেছিল বিভিন্ন মহলের সঙ্গে। এ ছাড়া কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের সময়ও সংলাপ হয়েছিল। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশনের সংলাপে ৩৯টি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নারীনেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছিলেন। সংলাপে ৫০টি সুপারিশ পেয়েছিল তারা। সংলাপে আসা সুপারিশগুলো তিন ভাগে ভাগ করেছিল ইসি। এর মধ্যে একটি ছিল সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রস্তাব ও সুপারিশ, দ্বিতীয়- রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল কিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ, তৃতীয়ত- নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত কিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ। তবে নির্বাচনী আইনের সংস্কার, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাসহ ৩৪টি প্রস্তাব ও সুপারিশকে ইসি নিজেদের এখতিয়ারভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নূরুল হুদা কমিশন। তবে বেশিরভাগ সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি