বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যস্ত সাকিব। দুবাই থেকে নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিচ্ছেন ছবি। সাকিব ডুবে আছেন নিজেকে নিয়েই। দেশের ক্রিকেটে কী হলো, সে খবর রাখার সময় কোথায় তার। অথচ দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে যে আগুন জ্বেলে দিয়ে গেছেন সাকিব, তাতেই যে পুড়ছে দেশের ক্রিকেট। গত তিন দিন ধরে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ তিনি। তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বক্তব্যের পর বক্তব্য দিচ্ছেন বিসিবি কর্মকর্তারা। সাকিব ইস্যুতে হার্ড লাইনে যাওয়ার বার্তাও দিচ্ছে বোর্ড। সে ইঙ্গিত পেয়ে কিছুটা নমনীয় হয়ে থাকতে পারেন তিনি। দেশে ফিরে উত্তেজনায় জল ঢেলে দিতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও আশা করেন তাই।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে এক বছরের বিরতি চেয়ে চিঠি দিলেও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে লাল বলের খেলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেননি সাকিব। সে কারণে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণের দলেই রাখা হয় তাকে। তিনিই এখন বিরতি নিতে চান ওয়ানডে সিরিজ থেকে। বিষয়টি নিয়ে বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথাও বলছেন না ৩৪ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। যেটা ভালো লাগেনি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। সাকিবের কথাবার্তায় বিরক্ত তিনি। জালাল ইউনুস, খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছেও জিনিসগুলো ভালো লাগেনি। সাকিব ইস্যুতে তাই পাপনের পর মুখ খোলেন বোর্ডের এ দুই পরিচালক। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টিম ডিরেক্টর সুজন কড়া বার্তাই দিলেন সাকিবকে, ‘সাকিবকে ছাড়াই দল করছি এখন। তারা আমাদের ?গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কিন্তু তারা না খেললে যে দেশের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবে, তা না। জোর করে তো কাউকে খেলানো যাবে না। তাদের জায়গায় অন্য যারা সুযোগ পাবে তাদের জন্য বড় সুযোগ হবে।’ বিদেশে খেলা থাকলেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। কখনও সাকিব, কখনও তামিমকে পাওয়া যায় না। সাকিব নিউজিল্যান্ডে খেলতে যাননি শেষ দুটি সিরিজে। গত এক বছরে তামিম বেশিরভাগ সময় খেলেছেন শুধু ওয়ানডে। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন তিনি। সিরিজ শুরুর আগে তারকা ক্রিকেটারদের ছুটি নেওয়ার এই সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুজন, ‘আমার মনে হয় এখন উপযুক্ত সময়, বোর্ডের উচিত এগুলোর দাঁড়ি টানা। যথেষ্ট হয়েছে। বারবার এমন হতে পারে না যে, আমি চাইলাম খেললাম, চাইলাম খেললাম না। এখন শুধু সাকিবের কথা বলছি না, ওদের (সিনিয়রদের) ছাড়াই ভাবার সুযোগ এসেছে।’
দেশের খেলা ফেলে আইপিএলে খেলতে গেছেন সাকিব। নিয়মিত টেস্ট না খেলেও বেতন নেন তিন সংস্করণের। তবুও বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারকে কাঠগড়ায় তুলতে চান না টিম ডিরেক্টর, ‘আমরা ওকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে হবে না। সে অনেক কিছু করেছে। ওর কোনো কথা থাকতেই পারে। আসলে কথা বলে খোলাসা হবে। হয়তো তার ব্রেক দরকার, একঘেয়েমি আছে। ওর মতো বেশি ক্রিকেট তো আমাদের আর কোনো ক্রিকেটার খেলে না। তো এতকিছু না বলে একটু অপেক্ষা করি।’ তবে বোর্ডের কারও খবরদারি করা অন্যায্য বলেও মনে করিয়ে দেন পরিচালক সুজন, ‘তুমি বিসিবিকে নির্দেশ দিতে পার না। খেলতে না চাইলে খেলো না। তোমার বিরতি নিতে মন চায় পুরো বিরতি নাও, কেউ তো তোমাকে আটকাচ্ছে না। আমাদের সভাপতিও এটাই বলতে চান। আমি জোরে বললাম, উনি আস্তে বলেছেন। ‘লাস্ট কল’ অবশ্যই বিসিবির। ওরা বিসিবির প্রডাক্ট। বিসিবি ওদের প্রডাক্ট না। বিসিবির জন্যই ওরা। ওরা মেইন স্টেকহোল্ডার হতে পারে; কিন্তু ওদের পেছনে অনেক ইনভেস্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর তো কেউ না।’ নরমে গরমে সুজনও বুঝিয়ে দিলেন, সাকিব না খেললেও থেমে যাবে না দেশের ক্রিকেট।