জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কল্যাণেই বাংলাদেশ আজকে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি রাষ্ট্র পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ে তোলা হবে বলেও প্রত্যয় জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকালে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রেখে যাওয়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন সরকার প্রধান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজন করা হয় তার জন্মশত বার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। তাই অনুষ্ঠানে ছিলো শিশুদের উপস্থাপনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। তুলে ধরা হয় ছোট খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প।
‘হৃদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের সবচে বেশি পছন্দ করতেন। দেশ স্বাধীনের পর শিশুদের উন্নত ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে নানা রকম আইন করেছিলেন তিনি। তাঁর পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের জন্য আমরা সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ রেখে যেতে চাই। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা আর ধরে রেখে আগামী দিনে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো, এটাই হচ্ছে আমাদের আমাদের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, আজকের শিশুরা হবে আগামী দিনের কর্ণধার। শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়, সুন্দর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সকল কর্ম পরিকল্পনা।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ থেকে আবৃত্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল /এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলা করতে। তিনি যখন বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতেন, তখন মনে হতো তিনি নিজেই একটা শিশু। এটাই ছিল তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় সরলতা।
শিশুরা যেন কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, করোনার সময় স্কুল বন্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন সব স্কুল খুলে গেছে। এখন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ আবার এসেছে। তারা পড়াশোনা করবে। সেটাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানাদিক তুলে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে তিনি কেবল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত। আমি আর আমার ছোট বোনে রেহানা বেঁচে গিয়েছিলাম। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে রিফিউজির মত দেশ-বিদেশে কাটাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি ফিরে এসেছিলাম। এমন একটি অবস্থায় যেখানে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, আল-বদর, রাজাকারদের রাজত্ব ছিল। তবুও আমি ফিরে এসেছিলাম, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
এ সময় আগামী ২১ থেকে ২৬ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিতব্য লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে মুজিববর্ষ লোকজ মেলার আয়োজনের আইডিয়াটি এসেছে শেখ রেহানার চিন্তা থেকে।
জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি এ মেলার আয়োজন করছে। আগামী ২১ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়ার সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলা নানা বৈচিত্র্যে ভরা। বৈচিত্র্যময় বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী লোকজ পণ্যের প্রদর্শনীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকবে বলেও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শেখ মুনিয়া ইসলাম।