বিবেক অগ্নিহোত্রী নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ বেশ আলোচনা তৈরি করেছে ভারতে। এই সিনেমাকে দেশটির কিছু রাজ্যে করমুক্তও করা হয়েছে। শাসকদল বিজেপির নেতা-মন্ত্রী, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই সিনেমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
তবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। অনেকে এটিকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী অপপ্রচার বা প্রোপাগান্ডা সিনেমা বলেও মন্তব্য করেছেন। এই সমালোচকদের দলে যোগ দিয়েছেন বলিউডের পরিচালক বিনোদ কাপরি।
বিনোদ এই ছবির সরাসরি সমালোচনা না করলেও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’র প্রসঙ্গ টেনে ‘গুজরাট ফাইলস’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করেছেন, ‘আপনি কি সেই ছবি মুক্তি পেতে দেবেন?’
গুজরাটে ২০০২ সালে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছিল। এতে তখন প্রায় এক হাজার মানুষের প্রাণ যায়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম। নরেন্দ্র মোদী তখন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই দাঙ্গায় রাজ্য সরকারের লোকজন ও পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা করেছিল বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠে। ওই সময় বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগে প্রায় এক দশক ধরে মোদীকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিনোদ তার টুইটে লিখেছেন, ‘এই গুজরাট ফাইলস ছবিতে আপনার ভূমিকার সত্যটা তুলে ধরবো। যা ঘটেছিল তাই দেখাবো। আপনি কি এই ছবি সবার সামনে তুলে ধরতে দেবেন! আমার এই ছবি তৈরির জন্য বেশ কয়েকজন প্রযোজক রাজিও হয়েছেন। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভর করে আশা করি গুজরাট ফাইলসও মুক্তি পেতে অসুবিধা হবে না।’
‘গুজরাট ফাইলস’ বানাতে চান পরিচালক, চাইলেন মোদীর অনুমতি
গত ১১ মার্চ মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। মুক্তির আট দিনের মধ্যেই ১০০ কোটির ক্লাবে নাম লিখিয়েছে সিনেমাটি। এর মূল বিষয়বস্তু কাশ্মীরে ১৯৯০ এর দশকে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত। সেই সংঘাতের জেরে সেখান থেকে বিতাড়িত হন কয়েকশ’ কাশ্মীরি পণ্ডিত। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, দর্শন কুমার, পল্লবী যোশী প্রমুখ।
এই সিনেমা নিয়ে বিজেপিসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে বেশি। এর প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে কঙ্গনা রানাউত, ইয়ামি গৌতম, অক্ষয় কুমার, পরেশ রওয়াল প্রমুখের মতো অভিনয়শিল্পীদের।
তবে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। খোদ বলিউডেই এই সিনেমার বিরুদ্ধে কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছে। অনেকে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’কে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সিনেমা বলে অভিহিত করেছেন।
সিনেমার প্রচারণায় পরেশ রাওয়াল টুইট করে লিখেছিলেন, ‘যদি ভারতীয় হন, তা হলে দ্য কাশ্মীর ফাইলস ছবিটি অবশ্যই দেখা উচিত’। তার ওই টুইটে শিবানী ধর সেন নামে এক নারী কাশ্মীরি পণ্ডিত লিখেছেন, ‘আমি একজন ভারতীয়। কাশ্মীরি পণ্ডিতও বটে। তবু ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি দেখবো না। অনেক হয়েছে। নিজেদের বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য আমাদের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ইতিহাসকে ব্যবহার করা বন্ধ করুন।’
এই সিনেমার বিষয়বস্তুর সমালোচনা করে বর্ষিয়ান অভিনেতা নানা পাটেকর বলেছেন, ‘হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই ভারতেরই বাসিন্দা। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা কাম্য নয়। কোনো এক ছবির জন্য বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ঠিক নয়। সবাই যেন শান্তিতে থাকেন। এমন ছবির মাধ্যমে যারা সেই চেষ্টা করছেন তাদের কাছে জবাব চাওয়া উচিত। জানানো উচিত, এমনটা করলে সমাজ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।’