একসময় যে ‘এস-৪০০’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের মিত্র তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটিয়েছিল, এখন সেই ‘ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলা মোকাবিলায় ‘কাজে লাগাতে চাচ্ছে’ বাইডেন প্রশাসন।
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যৌথ প্রকল্প থেকে বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ন্যাটোভুক্ত দেশটির ওপর চাপিয়ে দেয় অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা।
শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, তুরস্কের কাছে থাকা রাশিয়ার তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেই সম্ভাবনা অনানুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনছে যুক্তরাষ্ট্র।
৩টি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা গত মাস থেকেই তুরস্কের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই ভাবনা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের তুরস্ক সফরের সময় এ বিষয়টি সামনে আনা হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে বাইডেন প্রশাসন আক্রান্ত দেশটিকে রক্ষায় রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৩০০’ ও ‘এস-৪০০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য মিত্রদের অনুরোধ করে আসছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, হোয়াইট হাউসের এমন অনুরোধ নিঃসন্দেহে তুরস্ককে ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় শেরম্যান ইউক্রেনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা কীভাবে কাজ করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কীভাবে উন্নত করা যায়, সেসব বিষয়ে কথা বলেছেন।
তবে এস-৪০০ ব্যবস্থা ইউক্রেনে ব্যবহারের বিষয়ে তুরস্কের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে আঙ্কারার হাতে যখন ‘এস-৪০০’র প্রথম চালান আসে, তখন থেকে ওয়াশিংটন এই রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে তুরস্ককে সরে যাওয়া অনুরোধ করে আসছে। তুরস্ক তা না মানায় দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি ন্যাটো সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তুরস্ককে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরির যৌথ কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তুরস্কের দাবি, মিত্ররা সন্তোষজনক শর্তে অস্ত্র সরঞ্জাম দিচ্ছিল না বলে তারা বাধ্য হয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ব্যবস্থা কিনেছে।
সূত্র জানায়, ওয়াশিংটন সম্ভবত আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা হিসেবে ইউক্রেনে এস-৪০০ ব্যবহারের এই ভাবনা ছড়িয়ে দিয়েছে। কেননা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে ভীত তুরস্কও।
অপর সূত্র জানায়, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সাম্প্রতিককালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কিয়েভ অভিযান নিয়ে ক্রেমলিন আঙ্কারাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
ফেলাডেলফিয়ার পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যারন স্টেইন রয়টার্সকে বলেন, ‘তুরস্ক যেন ধারালো ছুরির ওপর দিয়ে হাঁটছে। যদি এস-৪০০ ইউক্রেনে পাঠানো হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা মস্কোর রোষানলে পড়বে।’
তার মতে, এরদোয়ানের কাছে রাশিয়ার ‘এস-৪০০’ তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ‘তাই এটি হস্তান্তর আঙ্কারার জন্য সহজ হবে না,’ যোগ করেন অ্যারন স্টেইন।
এ ছাড়াও, রাশিয়ার তৈরি এমন অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।