গুঞ্জন অবশেষে সত্যি হলো। আর্সেনালের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধন ছিন্ন করে তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাচে পাড়ি জমালেন মেসুত ওজিল।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) ইস্তানবুলে তুরস্কের ক্লাবটির সঙ্গে ৩২ বছর বয়সী সাবেক জার্মান মিডফিল্ডার তিন বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তার বার্ষিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ মিলিয়ন ইউরো। যদিও আর্সেনালে তার বেতন ছিল বার্ষিক ২০ মিলিয়ন ইউরো।
আর্সেনালের জার্সিতে ৮ বছরে ৩টি এফএ কাপের শিরোপা জেতার পাশাপাশি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৫৪ ম্যাচ খেলে ৪৪টি গোল করেছেন ওজিল। তবে গত মার্চ থেকেই গানারদের বর্তমান কোচ মিকেল আরতেতার দলে উপেক্ষিত ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে সেসময়ের ক্লাব রেকর্ড ৪২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে আর্সেনালে পাড়ি দেন ওজিল। প্রথম মৌসুমেই এফএ কাপের শিরোপার স্বাদ পান এই বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার। আর তাতে লন্ডনের ক্লাবটির ৯ বছরের শিরোপাশূন্যতার অবসান ঘটে।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ৩ মাস ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকার পরও ৩২ ম্যাচে মাঠে নামেন ওজিল। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে সেবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো এফএ কাপের শিরোপা জেতে আর্সেনাল। পরের মৌসুমে ১৯টি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। থিয়েরি অঁরি ও কেভন দে ব্রুইনার পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেবার তিনি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ছয় ম্যাচে গোল বানিইয়ে দিয়ে রেকর্ড গড়েন। আর্সেনালের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন।
কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে ওজিলের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্লাবের অভ্যন্তরে অসন্তোষ দেখা দেয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী খেলোয়াড়ে পরিণত হন তিনি। তার সাপ্তাহিক বেতন দাঁড়ায় সাড়ে ৩ লাখ পাউন্ড। কিন্তু গত গ্রীষ্মে করোনা মহামারির মধ্যে তিনি বেতন কমাতে রাজি হননি। এ নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী ওজিল জার্মানি জাতীয় দল থেকে অবসর নেন ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তখনকার আর্সেনাল কোচ উনাই এমেরির দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আরতেতা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১০ ম্যাচেই মাঠে নামেন ওজিল। কিন্তু করোনার কারণে তিন মাস খেলাধুলা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলেও আর মূল দলে ফেরা হয়নি তার। এমনকি অক্টোবরে তাকে ইউরোপা কাপ ও প্রিমিয়ার লিগের ২৫ সদস্যের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয় তাকে।
ওজিলের জন্ম জার্মানিতে হলেও তার পূর্বপুরুষরা তুরস্কের। তিনি বিয়েও করেছেন এক তুর্কি নারীকে। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশ ভালো। ওজিলের বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে অবশ্য তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে ওজিলকে। কিন্তু সমালোচনায় পিছপা হননি তিনি। তুরস্কের রাস্তাঘাটে এমনকি ওজিল ও এরদোগানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সম্বলিত পোস্টার ও বিলবোর্ডও চোখে পড়ে।
এদিকে ফেনেরবাচের মত ক্লাবের জন্য ওজিলকে কেনা আর হাতি কেনা একই কথা। কারণ জার্মান ফুটবল তারকার বার্ষিক বেতন ১৩ মিলিয়ন ইউরো। অন্যদিকে তুর্কি জায়ান্টদের কাঁধে ঋণের বোঝা আছে ৫১৫ মিলিয়ন ইউরো। ফলে এত বড় বিনিয়োগে সমর্থকদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফেনেরবাচের প্রেসিডেন্ট আলি কচ। তিনি এমনকি সমর্থকদের কাছে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছেন।