ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল দ্রুত ও নিরাপদে পরিবহনের জন্য নতুন করে নৌরুট খনন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়।শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালে।
মোংলা থেকে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত নতুনভাবে নৌরুট খনন করা হবে।
এ নৌপথের মোট দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। এই রুট খননে নতুন করে ৬৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, যা টাকার অংকে ৬৬৩ কোটি ২২ লাখ।
মূল প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৯৫৬ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৬১৯ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্তই থাকছে।
গত রোববার (১০ জানুয়ারি) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশীদের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-২) মো. উবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি চলমান আছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে এটা এখনো পাস হয়নি। প্রকল্পের কাজের পরিধি বৃদ্ধির কারণেই মূলত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর হতে রূপপুর পর্যন্ত নৌ পথের প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করার নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তের আলোকে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত বহমান গঙ্গা, পদ্মা, বলেশ্বর ও কঁচা নদী তথা মোংলা বন্দর হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন করা হবে। তবে খনন করতে হবে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার নৌপথ।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। জনবল সংখ্যা বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি, নৌ-সহায়ক সাংকেতিক বয়া বাতিসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি স্থাপন খাতটি নৌকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিবর্তে বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন, নৌ চলাচল সহায়ক যন্ত্রপাতির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। নতুন খাত হিসেবে ভ্রমণ ভাতা, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, ইকো সাউন্ডার ও জিপিএস, মোটরসাইকেল, অফিস ফার্নিচার, পানি ফিল্টার, স্ট্যান্ড ফ্যান অন্তর্ভূক্তি, স্পিড বোটের পরিবর্তে কেবিন ক্রুজারের সংস্থান বাবদ ব্যয় বাড়ছে।
মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিংয়ের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি, অফিস সরঞ্জামাদির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, ফসলের ক্ষতিপূরণ ব্যয় বৃদ্ধি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৮৭০ কিলোমিটার জরিপ, ১০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতিপূরণ, ২০০ লাখ ঘন মিটার প্রকৌশল জরিপ, ৫৩৭ লাখ ঘনমিটার মেইনটেনেস্স ড্রেজিংসহ বাঁশের পাইলিং ও তর্জা বেড়া নির্মাণ করা হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সার্বিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রূপপুর ভারী যন্ত্রপাতি সহজে আনা নেওয়া করার জন্য বড় ভেসেল (নৌযান) চলাচল উপযোগী ৪ দশমিক ২ থেকে ৪ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা (ড্রাফট) বজায় রেখে নৌ-রুট সচল করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে নেভিগেশন এইড স্থাপন করবে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নৌ-রুটের মাধ্যমে আমদানি শুরু হবে। এছাড়া ভারী যন্ত্রপাতি আনতে হবে বিধায় লাইটিং সিস্টেম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অফ পয়েন্ট থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মিত হবে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহল প্রকল্প। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মালামাল স্বল্প সময়ে যাতে নিরাপদে পৌঁছানো যায় সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মাধ্যমে খনন কাজের পরিমাণ ৯৩ দশমিক ১০ লাখ ঘনমিটার। পদ্মা বাংলাদেশের ব্যতিক্রমধর্মী নদী। পদ্মানদীর তলদেশ অনবরত পরিবর্তন হয়। তার জন্য প্রতি ঘনমিটার মাটির খনন-ব্যয় ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন খনন করা নৌরুটে সাধারণ বয়ার পরিবর্তে লাইটিং বয়া স্থাপন করা হবে।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম