1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আশিষ: র‌্যাব

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে মিলে তিনি ও ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

বুধবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের ঠিক পাশেই ছিল সে সময়ে বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। নিহত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে বারবার ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের পাশে ছিল সে সময়ের বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। নিহত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এরপর তিনজন মিলে সোহেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেটার দায়িত্ব দেওয়া হয় ইমনকে।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে বনানীর ট্রাম্পস্ ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫৯। পরে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। তবে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলার এক নম্বর আসামি আদনান সিদ্দিকী দুই বছর পর হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। পরে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট পুনরায় আরেকটি রায় দেন। এ রায়ে আগের জারি করা রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। আদালত চলতি বছরের ২৮ মার্চ তাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ফলে র‌্যাব এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

‘এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর অভিযানে রাজধানীর গুলশান থেকে ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে (৬৩) গ্রেফতার করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয় ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা।’

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে গ্রেফতার আশিষ রায় চৌধুরী এবং আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ট্রাম্পস্ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিল আশিষ রায় এবং অবশিষ্ট ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন পলাতক বান্টি ইসলাম।’

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য আসতেন। গ্রেফতার আশিষ রায় চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকে ওই ক্লাবে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ করে আসছিলেন। পরে ট্রাম্পস ক্লাবটি সব আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এবং গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। আজিজ মোহাম্মাদ ভাই মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং বা তাদের পরিচালনা করার জন্য এ ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সখ্য তৈরি হয়।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ রক্ষার জন্য ঢাকায় ট্রাম্পস ক্লাবকে একটা সেফ হাউজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আবার ইমনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও অসামাজিক কার্যকলাপ করতে একমাত্র সেফ হাউজ পেয়েছিলেন। সেই মুহূর্তে যদি ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যেতো, তাহলে তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। সব ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এ ট্রাম্পস্ ক্লাব। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ওই সময় সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মসজিদ কমিটির পক্ষের হয়ে ট্রাম্পস্ ক্লাবটি বন্ধ করতে বারবার চেষ্টা করায় বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন। এ ঘটনায় ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর সরাসরি তর্ক এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীকে অনুরোধ করেন।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পস ক্লাবে জনসম্মুখে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরী অপমান করার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরী পরিকল্পনা করতে থাকেন। ট্রাম্পস ক্লাবে তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন বান্টি ইসলাম, আশিষ রায় চৌধুরী ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনকে দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাব দেন। তৎকালীন মাফিয়া আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং আশিষ রায় চৌধুরীর অনুরোধে ইমন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাবে রাজি হন এবং পরে ইমন এ খুন করে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ মার্চ আশিষ রায় চৌধুরীর নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে তিনি ৭ এপ্রিল দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তার আগেই রাজধানীর গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

দীর্ঘ ২৪ বছর আগের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার পলাতক ও চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরীকে মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) রাতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর গুলশান-২ এর ২৫/বি ফিরোজা গার্ডেন নামে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি