করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য মুখে খাওয়ার নতুন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্যাক্সলোভিড বাজারে এনেছে ফাইজার। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম এই ওষুধটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই অ্যান্টিভাইরাস ওষুধকে ‘করোনার সেরা ওষুধ’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ডব্লিউএইচও এ কথা বলেছে। খবর এএফপি।
সংস্থাটি বলছে, যারা করোনার টিকা নেননি বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের চিকিৎসায় ফাইজারের মুখে খাওয়ার এই ওষুধ বেশি কার্যকর। প্রায় ৩ হাজার ১০০ রোগীর ওপর পরিচালিত দুটি ট্রায়ালের ফলাফলের ভিত্তিতে এ তথ্য জানায় ডব্লিউএইচও। ফলাফলে দেখা গেছে, করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে প্যাক্সলোভিড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের এই ওষুধ দেওয়া যাবে, তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যাক্সলোভিডকে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে সবার প্রতি। স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নিরমাট্রেলভির ও রিটোনাভিরের সমন্বয়ে তৈরি প্যাক্সলোভিড হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকিতে থাকা মৃদু ও মাঝারি মাত্রার কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের জন্য সেরা ওষুধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে প্যাক্সলোভিড নিয়ে দুই ধাপের ট্রায়াল। ৩ হাজার ১০০ মানুষের ওপর চালানো এই ট্রায়ালে দেখা গেছে, এই ওষুধ সেবনের ফলে কোভিডে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমেছে। ট্রায়ালের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি হাজারে ৮৪ জন কম রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
প্যাক্সলোভিডের ব্যবহারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উৎসাহিত করলেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য এই ওষুধ কতটা সহজলভ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মতো এই ওষুধটিও নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর পক্ষে পাওয়া কঠিন হতে পারে। এই ওষুধপ্রাপ্তির দিক থেকে এসব দেশ অনেক পেছনে পড়ে যেতে পারে।
এর আগে ফাইজার গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল, ২০২২ সাল নাগাদ প্যাক্সলোভিডের বিক্রি ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আমরা কঠোরভাবে সুপারিশ করছি যে ফাইজার যেন এই ওষুধের দাম ও উৎপাদন চুক্তি নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আরও বেশি ওষুধ নির্মাতা এটি উৎপাদন করে এই ওষুধকে দ্রুত সাশ্রয়ে সহজলভ্য করার সুযোগ পায়।
গুরুতর করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধটি কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে কোনো মতামত দিতে রাজি হননি ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে।