তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি নেতারা কিভাবে পালাবেন, সেই পথ খোঁজার জন্য তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। হাছান মাহমুদ আজ চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এই আহবান জানান।।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা শ্রীলঙ্কার তুলনা বাংলাদেশে দেয়, তারা অনেক আগেই শ্রীলঙ্কার মতো পালিয়েছেন। কেননা আজকের শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে তারাও পড়েছিলেন, তাই তারা এসব কথা বলছেন। শ্রীলঙ্কার নেতারা এখন যেভাবে পালাচ্ছেন, বিএনপির নেতারাও সেভাবে আগেই পালিয়ে গেছেন। তারেক রহমান ‘আমি আর রাজনীতি করবো না’ মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। ঢাকায় তাদের নেতা মাহবুবুর রহমানকে তাদের দলের নেতাকর্মী ও সাধারন জনগণ ধাওয়া করেছিল, জুতা নিক্ষেপ করেছিল। ৮০ সালে জিয়াউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যান তখন তাকেও ধাওয়া করা হয়েছিল। এখন আপনারা নিজেরা কিভাবে পালাবেন সেই পথ খুঁজুন।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভীসহ বিএনপি নেতারা পদ্মা নদীর ওপারে কীভাবে যাবেন তিনি তা দেখার অপেক্ষায় আছেন। তারা কি গাড়িতে চড়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাবেন, নাকি আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে ওপারে যাবেন, তিনি সেটি দেখার অপেক্ষায় আছেন বলে উল্লেখ করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার যখন পদ্মা সেতু করছিল, তখন বিএনপি দেশে গুজব ছড়িয়েছিলো যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে মানুষের মাথা লাগবে।’ আবার সরকার যখন ভারত থেকে করোনা টিকা নিয়ে এসে, দেশের মানুষকে দেয়া শুরু করলো। তখন বিএনপি গুজব ছড়ালো যে, ঐ টিকা কাজ করে না। রিজভী সাহেব বক্তব্য দিলেন, আমাদের করোনা টিকা অকেজো। পরে তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে টিকা ঠিকই নিয়েছিলেন। আমাদের চট্টগ্রামের ডা. জাফরুল্লাহও কথা বলেছিলেন টিকা নিয়ে। পরে তিনিও লজ্জা ভেঙে টিকা নেন এবং বলেন, ‘আমার আরাম লাগছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বলেন, তৃণমূল হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ। জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতারাই এ দলকে টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা সমস্যা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ও বিচলিত হয়েছেন, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন, মূল নেতৃত্বের সাথে বেঈমানি করেছেন। কিন্তু তৃণমূল কখনো আওয়ামী লীগের সাথে বেঈমানী করে নাই।
হাছান মাহমুদ বলেন,‘ আমরা আজকে প্রায় সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায়, এতদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। দলের মধ্যে সুবিধাবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আজকে আমাদেরকে ভাবতে হবে, আমরা কিভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবো। আমি দেখতে পাই নেতা আসলে বিপুল শ্লোগান হয়, সেলফি তোলার জন্য প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু সেই ছবি তুলে শুধু ফেসবুকে দেয়া ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কাজ করতে আমি দেখিনা।’
নিজেকে আওয়ামী লীগের মাইকিং করা কর্মী উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরূপ সমালোচনা হয়, তখন তার প্রতিবাদে আমাদের নেতা-কর্মীদের যেভাবে সরব হওয়া দরকার, সেটি হতে দেখিনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো তুলে ধরার জন্য তরুণ নেতাদের অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান বলেন, গ্রামীণ জনপদে অনেক রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে। সেখানে ১৩ বছর আগে কি ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কারণে আজ কি হয়েছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সংসদের চীপ হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপন ও সংসদ সদস্য মোস্তফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান প্রমুখ।