ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলোকে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কেউ যদি এগুলোকে এর বিপরীত পদ্ধতিতে পরিচালনা করে, তবে এগুলো তার জন্য দুনিয়া-আখিরাতে ক্ষতির কারণ হবে। তাই ধন-সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে যেমন আল্লাহর আইন মেনে উপার্জন করা উচিত, তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী ও সংযত হওয়া উচিত।
উক্ত আয়াতে এতিমের সম্পদ খরচ করার ব্যাপারে সংযত ও হিসেবি হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো অবস্থায়ই তাদের সম্পদ অপচয় না হয়। এই আয়াত দ্বারা আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়, তা হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তান-সন্ততি বা অধীনদের মধ্যে পরিপক্বতা আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হাতে সম্পদ ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ তারা এই সম্পদ অপচয় বা অপব্যয় করে নষ্ট করে ফেলবে।
শুধু এতিমের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত খরচের ক্ষেত্রেও কখনো অপচয় যাতে না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন, আমাদের উচিত সেগুলো যথাযথভাবে ভোগ করা, অপচয় থেকে বিরত থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না, এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার যার কিছু দেখতে এক রকম, আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফলদান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও। আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪১)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ করো, আর খাও এবং পান করো। তবে অপব্যয় ও অমিতাচার করবে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পানাহার করো, দান-খয়রাত করো এবং পরিধান করো যতক্ষণ না তার সঙ্গে অপচয় বা অহংকার যুক্ত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬০৫)
তবে এর মানে এই নয় যে, আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করা যাবে না, মিসকিন/মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করা যাবে না। বরং তাদের জন্য সাধ্যমতো ব্যয় করা প্রশংসনীয়। প্রত্যেকের উপার্জনের মধ্যে তাদেরও হক আছে। আল্লাহর প্রিয় হতে চাইলে সাধ্যমতো তাদের জন্য খরচ করতে হবে। তবে খরচের ক্ষেত্রে অবশ্যই মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও, আর অপব্যয়ে অপচয় কোরো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তো তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)
মহান আল্লাহ আমাদের অপচয় থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।