সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মুখ ফসকে যেন সত্যিটাই বেরিয়ে এসেছিল। ভুল করে তিনি ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানকে ‘নিষ্ঠুর’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে ফেলেছেন। যদিও তিনি আসলে এমনটা বলতে চাননি। তিনি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কথা বলতে গিয়েই মুখ ফসকে ইরাকে মার্কিন হামলার কথা বলে ফেলেছেন। পরে অবশ্য তিনি তার সেই ভুল সংশোধন করেছেন।
কিন্তু মুখ থেকে একবার কোনো কথা বেরিয়ে গেলে তা শত চেষ্টা করলেও তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না। তিনি ভুল করে এমন মন্তব্য করলেও আসলে সত্যিটাই বলে ফেলেছেন। প্রকৃত অর্থে ইরাক যুদ্ধতো অযৌক্তিকই ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেটা স্বীকার করুক বা না করুক।
বুধবার (১৮ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে বুশ এমন বেফাঁস মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় ভারসাম্যের অনুপস্থিতি এবং ইরাকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নৃশংস হামলা শুরু করার একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ফলাফল এই যুদ্ধ। তিনি ইউক্রেন বদলে গিয়েই ইরাক বলে ফেলেন। তবে পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে বুশ মাথা নেড়ে বলেন, আমি আসলে ইউক্রেনের কথা বুঝিয়েছি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি কৌতুকের স্বরে এই ভুলের জন্য বয়সকে দোষারোপ করেন। এরপরেই উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।
২০০৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হামলা শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা রবার্ট ইনলাকেশ এক প্রতিবেদনে বলেন, মিথ্যা অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়েছিল যেটা এখন অনেকটাই প্রমাণিত বলা যায়। দেশটিতে মার্কিন হামলায় ১০ লাখেরও বেশি ইরাকি নাগরিক প্রাণ হারায়।
ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকানদের বলা হয়েছিল, বিশ্বশান্তির জন্য ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে সরানো দরকার। সাদ্দামের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তোলা হয়। তিনি গণহত্যা চালাতে চান এমন অভিযোগও ছিল।
তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সাদ্দাম হোসেনকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করেন। নাইন-ইলেভেনের হামলার কারণে এমনিতেই পশ্চিমাদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যবিরোধী বিদ্বেষ তুঙ্গে ছিল। সে সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে সে সময় ইরাক হামলাকে বৈধ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু সাদ্দামের বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আনা হয় তার মধ্যে বড় বড় অভিযোগগুলোই সত্য বলে প্রমাণ হয়নি। জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস ইরাক যুদ্ধকে আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। এত বছর পর বুশ মনের অজান্তেই নিজের মুখেই স্বীকার করে নিলেন ওই যুদ্ধ অযৌক্তিক ছিল।