আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯টি পণ্যের একই পরিমাণ আমদানি করতে ৮০২০০ কোটি ডলার (৮ দশমিক ২ বিলিয়ন) অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ তথ্য জানান।
রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিগত দুই বছরের অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯’র প্রভাব কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল; ঠিক তখনই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর মাধ্যমে সৃষ্ট ও চলমান সংঘাতের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানাবিধ বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি ১১৩ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বিশ্ববাজারে অন্তত ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তেল-গ্যাসের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে (যেমন গম, ভুট্টা, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও রেয়ার আর্থ খনিজ) রাশিয়া ও ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট হতে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করায় সার্বিকভাবে রাশিয়ার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে আসছে, যা বৈশ্বিক সরবার চেইনকে ব্যাহত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মে ২০২১ এর তুলনায় মে ২০২২ সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৬৫ শতাংশ। ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ শতাংশ, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ, গমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ। সে কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। এফএও’র তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী কৃষি ও খাদ্য-পণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২২ সালেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ কর্তৃক এপ্রিল ২০২২ এর ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- উন্নত অর্থনীতিসমূহে ২০২১ সালে সিপিআই মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ১ শতাংশ ছিল যা ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে। তন্মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। অন্যদিকে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিসমূহে ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২২ সালে অনেক বেড়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হবে মর্মে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।