ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে একটি মাদকের চালান আসবে ঢাকায়- এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করেন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীর, জব্দ করেন তিন কেজি আফিম। ১০-১২ বছরের মধ্যে এটিই বড় কোনো চালান।
আটক হওয়া মাদক আফিম কি না, তা জানতে রাসায়নিক পরীক্ষা করে ডিএনসি। পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, ওষুধের কাঁচামাল নয়, জব্দ করা চালানটি আসলে আফিমের, যা আফগানিস্তান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।
শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আসে যে, একটি চক্র আফিমের বড় চালান ঢাকায় এনে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। এরপর আমরা গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করি ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকি।
ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে এবং সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে দুই কেজি আফিমসহ মো. আবুল মোতালেব (৪৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (৪৪) নামে আরেকজনকে আরও এক কেজি আফিমসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া মো. আবুল মোতালেবের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত জনশক্তি ব্যবসায় জড়িত। তবে এর আড়ালে তিনি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়ার বাড়ি জামালপুরে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত একটি বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এর আড়ালে তিনি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
কীভাবে আফিমের চালান জব্দ করা হলো- সে সম্পর্কে অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, শপিং ব্যাগের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো ছিল দুই কেজি আফিম। অপর এক কেজি আফিমও পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণির মাদক। উদ্ধারকৃত তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে তিন কোটি টাকা।
আফিমের এ চালান কোন রুটে ও কীভাবে কারা নিয়ে আসছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধারকৃত আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গ্রেপ্তাররা আফিম নতুন করে ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল।
আফগানিস্তানে এখন তালেবান ক্ষমতায়। ২০২০ সাল থেকে নতুন করে আফগানিস্তানে চাষ হচ্ছে আফিম। এর সঙ্গে তালেবানদের কারো যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দুভাবে হয়ে থাকে। এক আফিম সরাসরি সেবন এবং দুই আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো ভয়ংকর মাদক তৈরি। আফগানিস্তান ছাড়াও পাকিস্তান ও ইরানে এর চাষাবাদ হয়ে থাকে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফিম চোরাচালানের সঙ্গে আরও দুজনের নাম আমরা পেয়েছি, যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে আফিমের উৎস এবং গন্তব্য কোথায় ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই নেটওয়ার্কের সব সদস্যকেই তদন্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে।
আফিম গ্রহণের ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। এটি গ্রহণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, গ্রহণকারী অবচেতন হয়ে পড়তে পারেন। মুখ ও নাক শুকিয়ে যাওয়া, বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ব্যবহারে মৃত্যুও ঘটতে পারে।