লেখা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম: মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যুত্থান দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) দ্বন্দ্বের ফল। এ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল গত বছরের সর্বশেষ নির্বাচনের পর থেকে। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর সেনাবাহিনী যখন দেখল এনএলডি আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমতাশীল হয়ে উঠছে, এটা সেনাবাহিনী নিজেদের জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করতে শুরু করল।
স্বাধীনতার পর থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে কর্তৃত্ব করে আসছে। এখানে পরপর দুই নির্বাচনে এনএলডি জিতল। তাদের এই অবস্থান সেনাবাহিনীর মধ্যে একধরনের চিন্তা তৈরি করেছে। এর সঙ্গে নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের পুনর্নিয়োগ নিয়ে। জেনারেল হ্লাইংয়ের চাকরির বয়স এখন প্রায় শেষের দিকে। তাঁর চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু এনএলডি নেতৃত্ব জেনারেল হ্লাইংয়ের পুনর্নিয়োগ নিয়ে তেমন ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এতে সেনাবাহিনীর ক্ষোভ ছিল। সেনাবাহিনী সর্বশেষ নির্বাচনকে একটি ইস্যু হিসেবে দাঁড় করায়। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে—সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আসলে সেনাবাহিনী ও এনএলডির মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। আর এরই মধ্যে আজ পার্লামেন্টের নতুন অধিবেশন বসার কথা ছিল। এরই মধ্যে এই অভ্যুত্থান হলো। খুব হিসাব করেই এটা হয়েছে। কারণ, পার্লামেন্ট বসলে নতুন নির্বাচন বৈধতা পেত। সেনাবাহিনী আজ এই অভ্যুত্থান করল, যাতে এই বৈধতা আর না আসে এবং
মিয়ানমারের এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য ভাবনার বিষয়। দেশটি থেকে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। তাদের ফিরিয়ে নিতে চলছে আলোচনাও। এখন মিয়ানমারের মূল ভাবনার বিষয় হবে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং তার সমাধান। এরপর তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা করবে। এখন বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মতামত না দিয়ে নিরপেক্ষ একটা অবস্থান বজায় রাখা, যাতে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যায়। মিয়ানমারে কারা ক্ষমতায় এল, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের সঙ্গে তাদের যে বিষয় নিয়ে কথাবার্তা আছে, সে বিষয়ে মনোনিবেশ করা এবং আলোচনা চালু রাখা। এখন এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু এই ডামাডোলে যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে বাংলাদেশকে নজর রাখতে হবে তীক্ষ্ণভাবে। বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা নিয়ে সরব থাকতে হবে।