অর্থনীতিতে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে এবং বিলাস পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশকিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা।
এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এর আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।
অর্থাৎ এসব বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের পুরো আমদানিমূল্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে আমদানিকারকদের। এসব পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণ দিতে পারবে না।
সব ধরনের মোটরকারসহ বেশকিছু বিলাস পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকেরা।
দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ফলে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে।
এ নাজুক পরিস্থিতিতে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে বিলাস পণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্র্নিধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোটরকার (সেডানকার,এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাব ও সাজসজ্জার সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন–সিরিয়াল ফুড (যেমন অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়, যেমন টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কুট, জুস, সফট ড্রিংকস ইতাদি), অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি ১ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করতে চাইলে তাকে পুরো টাকা নগদ দিতে হবে। ব্যাংক কোনো ঋণ দেবে না।
গত ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ১০ মে সে নির্দেশনায় পরিবর্তন এনে সব ধরনের গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানির এলসি খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন রাখতে বলা হয়।