তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের জেরে গত মে মাসে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা। এখন ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চলের আরেক দেশ পাকিস্তানসহ অনেকেই। তবে ঋণখেলাপির শীর্ষ ২৫ দেশের তালিকার মধ্যে নেই বাংলাদেশের নাম। অনলাইন সংবাদ প্রকাশক, ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট ‘যেসব দেশ রয়েছে সর্বোচ্চ ঋণখেলাপির ঝুঁকিতে-২০২২’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকলেও চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। শীর্ষে রয়েছে এল সালভাদর। দ্বিতীয় অবস্থানে ঘানা, তৃতীয় তিউনিশিয়া এবং পঞ্চম স্থানে মিসর। শীর্ষ দশে আরও আছে কেনিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, বাহরাইন ও নামিবিয়া।
রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর সঙ্কটে পড়েছে অষ্টম স্থানে থাকা ইউক্রেন। সরকারি বন্ড বিক্রি করতে না পারা, সুদের ব্যয় ও সরকারি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণেই দেশটির এ অবস্থান। জানা গেছে, সরকারি বন্ডগুলো অবিক্রিত থাকায় সেগুলোর দাম কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
অন্যদিকে সম্ভাব্য ঋণখেলাপি দেশের তালিকার শীর্ষে এল সালভাদরের নাম থাকার কারণ; দেশটির সরকারি ঋণ ও ঋণে উচ্চমাত্রায় সুদের হার। এল সালভাদরের মোট ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির ৮২.৬ শতাংশ। ফলে বার্ষিক মোট জিডিপির ৪.৯ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হয় দেশটিকে। হিসাবে এল সালভাদরের বার্ষিক ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন গুণ, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ঋণের সুদের হার ছিল ১.৬ শতাংশ।
শীর্ষে এল সালভাদরের নাম থাকার পেছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি। গত বছর (সেপ্টেম্বর-২০২১) এল সালভাদর বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনকে বৈধভাবে স্বীকৃতি দেয়। চলতি বছরের শুরুতে দেশটির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিন্তু আইএমএফের কথায় কোনো পাত্তাই দেয়নি দেশটি। বছর ব্যবধানে বিটকয়েনের মূল্য কমেছে ৫৬ শতাংশ।
ঋণখেলাপি ঝুঁকির এই তালিকাটি তৈরি করেছে বাণিজ্যবিষয়ক প্রকাশনা ব্লুমবার্গ। এ জন্য চারটি নির্দেশক বিবেচনায় নিয়েছে তারা। এক. সরকারি বন্ড, দুই. পাঁচ বছর মেয়াদি ডিফল্ট সোয়াপ, তিন. বার্ষিক সুদের খরচ এবং চার. সরকার গৃহীত ঋণ।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ দেশটির মোট জিডিপির ৭১.৩ শতাংশ। আর পাকিস্তানকে প্রতিবছর গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয় মোট জিডিপির ৪.৮ শতাংশ।
ঋণখেলাপির শীর্ষ ২৫ দেশের তালিকায় আরও আছে ব্রাজিল, অ্যাঙ্গোলা, সেনেগাল, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কোস্টারিকা, গ্যাবন, মরক্কো, ইকুয়েডর, তুরস্ক, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইথিওপিয়া, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকো। সম্প্রতি ব্যাপক মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে তুরস্কে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভোগাচ্ছে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের। এদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল ও সার কেনার চুক্তি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে ব্রাজিল।