গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে কাভালা শহরের কাছে পালেওচরি গ্রামে শনিবার গভীর রাতে একটি কার্গো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। উড়োজাহাজটি সাড়ে ১১ টন অস্ত্র ও মাইন নিয়ে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোৎসা স্টেফানোভিচ। এ ছাড়া সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটিতে থাকা আটজন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন।
আজ রোববার সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির নাম আন্তোনভ অ্যান-১২। এটি ইউক্রেন ভিত্তিক একটি সংস্থা পরিচালনা করছিল।
স্থানীয় টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ একটি বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনেছেন এবং উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরেও দুই ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলতে দেখেছেন। এলাকাটি বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভরে গেছে।
ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা মারিওস অ্যাপোস্টোলিডিস সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিশেষ সরঞ্জাম ও যন্ত্র নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। যখন এলাকাটি নিরাপদ মনে হবে, তখন তদন্ত দল সেখানে কাজ শুরু করবে।’
দুর্ঘটনাস্থল থেকে তীব্র গন্ধ বের হওয়ায় পৌরসভা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সমন্বয় কমিটি পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। তাদের সারা রাত জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল এবং তাদের বাড়ি থেকে বের না হতে এবং মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছিল সমন্বয় কমিটি।
বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আজ রোববার ভোরে দুই ফায়ার সার্ভিসকর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাতটি ফায়ার ইঞ্জিন দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত বিস্ফোরণের কারণে তারা কাছে যেতে পারেনি।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোৎসা স্টেফানোভিচ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কার্গো উড়োজাহাজটিতে সাড়ে ১১ টন অস্ত্র (মূলত বিস্ফোরক) ছিল। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের কারখানাতেই এগুলো উৎপাদিত। এই অস্ত্রের ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিস্ফোরকের মধ্যে ছিল মর্টার শেল, প্রশিক্ষণ শেল এবং মাইন।
গ্রিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্গোতে আটজন ক্রু ছিলেন। তাঁরা সবাই মারা গেছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ক্রু মেম্বাররা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইআরটি বলছে, ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে গ্রিক অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠানোর পরপরই কার্গোটি থেকে আর কোনো সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল না।
উড়োজাহাজটি জর্ডান অভিমুখে যাচ্ছিল বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তবে জর্ডান কর্তৃপক্ষ সে কথা সরাসরি স্বীকার করছে না। জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পেত্রা দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (সিএআরসি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ফ্লাইটটির ভ্রমণপথ অনুযায়ী জর্ডানের কুইন আলিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জ্বালানি ভরার জন্য বিরতি দেওয়ার কথা ছিল।