সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা দেশ ছাড়িয়ে ভারতের মাটিতেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপের কারণেই আসাম ভারতের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। আলফা (আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন) নেতাদের বিরুদ্ধে তার অ্যাকশন আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গৌহাটিতে রাজ্যের অতিথি ভবন ‘কইনাধারা’য় সফররত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে ১৫ বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি আছেন ছয়জন সাংবাদিক ও চারজন যুব প্রতিনিধি।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তায় আসামের মানুষের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আসাম ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক রক্তের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এই সম্পর্ক আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপের কারণেই আসাম ভারতের মধ্যে এখন সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ়চেতা অবস্থান আসামকে এক্ষেত্রে অনেক বড় সহায়তা করেছে। আলফা লিডারদের বিরুদ্ধে তার অ্যাকশন ভীষণভাবে সহায়তা করেছে আমাদের। এজন্য তার প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম বা আলফার বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিতে দুই দশক আগেও নানা সহিংসতার খবর পাওয়া যেতো। সে সময় আসামসহ ভারতের কয়েকটি অঞ্চলের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বাংলাদেশে যাতায়াত ছিল বলে শোনা যায়। ১৯৯৭ সালে আলফা নেতা অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশের পুলিশের জালে আটকা পড়ে। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০১৫ সালে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে সে সময় জানায় বিবিসি।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আসাম সফর করে গেছেন। তার মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। শেখ হাসিনা যদি ওই সময় (অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টাকালে) আলফার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিতেন, আজ আমরা এভাবে এই শান্তিপূর্ণ রাজ্যে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারতাম না। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণের যেই সফর আয়োজন হয়েছে, এই গর্বের মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারতাম না।
এ সময় আসামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা নিয়েও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সফরের বিষয়ে ব্রিফ করেন আসাম সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সেক্রেটারি মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং। এরপর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।
তারপর স্বাগত বক্তব্য দেন আসাম সরকারের মুখ্য সচিব যীষ্ণু বড়ুয়া। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবীন চৌধুরী (বীর বিক্রম)। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আসামের মানুষসহ ভারতের জনগণের ভূমিকা ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। শমসের মবীন চৌধুরী বলেন, যে সম্পর্ক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধি লাভ করছে এবং করবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে সুযোগ দিতে এমন সফরের আয়োজন করায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন এবং গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের এ সময় ধন্যবাদ জানান শমসের মবীন চৌধুরী।
এ সময় সুবিধাজনক সময়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি। আর সেজন্য তার হাতে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রও তুলে দেন শমসের মবীন চৌধুরী। জবাবে হিমন্ত বিশ্বশর্মাও তার বাংলাদেশ সফরে আগ্রহের কথা জানান।
অনুষ্ঠান শেষে প্রতিনিধিদলের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় শমসের মবীন চৌধুরীও প্রতিনিধিদলের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন।