শ্রীলঙ্কার ছয় বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট ভবনে দেশটির প্রধান বিচারপতি জয়ন্থা জয়াসুরিয়া কাছে তিনি শপথ নেন। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
৭৩ বছর বয়সী প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনিল গতকাল বুধবার সংসদীয় ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। আজ তাঁর শপথ নেওয়ার কথা জানিয়েছে রনিলের কার্যালয়।
শপথ গ্রহণের লাইভ সম্প্রচারে দেখা যায়, রনিল ও তাঁর স্ত্রী কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করছেন। এর পরপরই লাইভ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার একজন শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ‘কেন সম্প্রচারে বিঘ্ন ঘটানো হলো তা বের করার জন্য তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’
শপথ নেওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা নতুন প্রেসিডেন্টের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে বের করে আনতে তিনি শিগগিরই ৩০ জন মন্ত্রী নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটে তিনি পেয়েছেন ১৩৪ ভোট। অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা পেয়েছেন ৮২ ভোট।
এদিকে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা আবার রাজপথে নেমে এসেছেন এবং বলছেন, রনিল আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নজিরবিহীন গণবিক্ষোভের জেরে গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। পরে সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই ই-মেইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করে যান। এরপর গতকালের নির্বাচনে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট থেকে স্থায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আবার রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা রনিলের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার কলম্বোর গোতাগোগামা সাইটে কয়েক শ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন। গত সপ্তাহে এখানেই তাঁরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ক্ষমতাচ্যুতির আনন্দ উদ্যাপন করেছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, শ্রীলঙ্কার নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের জন্য রনিল বিক্রমাসিংহেও আংশিকভাবে দায়ী। কারণ তিনি গোতাবায়া সরকারের সহযোগী ছিলেন এবং তিনি গোতাবায়ার পছন্দের ব্যক্তি।