জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরার পর যারা ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাচ্ছেন, তাদের যোগাযোগের জন্য একটি ‘ই-মেইল হটলাইন’ চালু করেছে র্যাব। র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, হটলাইন ([email protected]) চালু হওয়ার মাত্র ১৫ দিনেই আশাপ্রদ সাড়া মিলছে।
র্যাবের ‘ডি-র্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’ এর অধীনে জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর এই প্রক্রিয়া সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রোগ্রামের আওতায় ৯ তরুণ-তরুণী গত ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করেছেন। এর আগেও ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনার পর সাত জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করায় র্যাব।
ডি-র্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামটি সমন্বয় করছে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গোয়েন্দা শাখা সূত্র বলছে, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের তিন থেকে চার জন জঙ্গি আত্মসমর্পণের জন্য ইতোমধ্যে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। র্যাব তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের এই সদস্যদের নামে বেশ কিছু মামলা আছে। আত্মসমর্পণের শর্তে তারা মামলা থেকে অব্যাহতিও চেয়েছে। র্যাব এরই মধ্যে তাদের কাছে থেকে মামলার কাগজপত্র চেয়ে নিয়েছে। সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।
এলিট ফোর্সটির গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন জঙ্গির সঙ্গে ইমেইল হটলাইনে র্যাবের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘হটলাইন চালুর পর আমরা আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। তবে আমরা সঠিক সংখ্যাটি বলতে চাচ্ছি না। কারণ সংখ্যা বললে এক ধরনের ভুল বার্তা যেতে পারে। যারা উৎসাহিত হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। পাবলিক পর্যায়ে যারা যোগাযোগ করছে, তারা প্রথমে নিশ্চিত হতে চায় এটা আসলেই র্যাবের কিনা। পরবর্তীতে তারা নিশ্চিত হলে, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব মানুষের উদ্দেশে আমাদের বার্তা থাকবে, তারা যেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসেন। যেসব জঙ্গির ফৌজদারি বা অন্য কোনও অপরাধের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত সম্পৃক্ততা হয়নি, তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে এবং র্যাবকে মেইলে জানালে, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহোযগিতা করবো। আর ফৌজদারি কোনও অপরাধের সঙ্গে যদি কেউ জড়িত থাকেন, তারাও আবেদন করতে পারবেন। তবে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। তাদেরও আইনি সহযোগিতা করবো।’
জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেছেন, ‘একজন জঙ্গির প্রথম তিনটি পর্যায় থাকে। সংগঠনের প্রতি সহমর্মিতা, সমর্থন ও অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে জড়িয়ে পড়া। আমরা এই তিন পর্যায়ের জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আমরা জঙ্গিদের ধ্বংস করতে পারবো। সামর্থ্য নষ্ট করতে পারবো। কিন্তু তার আদর্শ তো ব্রেনে। সেটা কী করবো? কারও ভেতর যদি ভুল কোনও আইডিওলজি থাকে সেটা তো বন্দুক দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না। এতে আইডিওলজি কিন্তু মরবে না। শুধু বন্দুক, অপারেশন এগুলো কাউন্টার টেররিজমের একটা অংশ। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নয়। আর সেজন্য র্যাব ডি-র্যাডিকালাইজেশন ও এই পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’
একই বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানুয়ারি মাসে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ আনুষ্ঠানে বলেন, জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা। এটা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই আমরা। তাদের এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। ‘তুই জঙ্গি’ বলে যেন তাকে আবারও নেতিবাচক পথে ঠেলে দেওয়া না হয়। ভুল বুঝতে পেরে যারা জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে এসেছে, তাদের সমাজে গ্রহণ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান র্যাবের এই মহাপরিচালক।